চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন রমজান শুরুর আগেই নগর ও জেলায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৪০টি মনিটরিং টিম মাঠে থাকার ঘোষণা দেয়। রমজানের আগ থেকেই প্রায় প্রতিদিনই বাজারে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার অভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু নিয়মিত অভিযানে থামছে না খাদ্যে ভেজালসহ নানা অনিয়ম। প্রতিদিনই জরিমানা, ভেজাল পণ্য জব্দসহ নানা দন্ড দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ আছে, রমজানের আগে থেকেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বৃদ্ধি, পণ্যে ভেজাল ও নানা কারসাজির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা করতে উন্মুখ হয়ে থাকে। রমজান এলেই তারা নিত্যপণ্যে যত প্রকার অনিয়ম, কারসাজি ও অপকৌশল আছে সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে অতি মুনাফায় মেতে ওঠে। প্রশাসন হাতে গোনা কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করলেও বড় একটি অংশই বাইরে থেকে যায়। ফলে তারা বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্যে মেতে ওঠে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোছাইন বলেন, একসঙ্গে মাসের বাজার না করে সপ্তাহের বাজার করতে সচেতনতা এবং ব্যবসায়ীদের লাভ বেশি না করতে প্রচারণার অংশ হিসেবে ১৫টি বাজারে কর্মসূচি পালন করি। এর ইতিবাচক প্রভাবও পড়ছে বলে মনে করি। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর অনিয়ম-কারসাজি ও পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি থামছেই না। কারণ হলো, অপরাধের ধরনের বিপরীতে শাস্তি কম। তাই তারা বেপরোয়া। বাড়ছে অনিয়মের বিস্তৃতি। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদেরই মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, রমজান আসার পর থেকে প্রতিদিনই বাজারে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অভিযানে জরিমানা ও পণ্য জব্দ করা হচ্ছে। তারপরও থামছে না পণ্যের ভেজাল করা, বেশি দামে বিক্রি, পণ্যে ক্রয় রশিদ সংরক্ষণ না করাসহ নানা অনিয়ম। তিনি বলেন, এখানে আইন প্রয়োগের চেয়ে নিজস্ব মানসিকতার পরিবর্তনের বিষয়টি জরুরি। মানুষকে ঠকানো এবং অতিরিক্ত মুনাফা না করার মানসিকতা লালন করতে হবে। জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই পরিচালিত হয় অভিযান। গতকাল দুপুরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি, সেমাইয়ে অননুমোদিত কেমিক্যাল ব্যবহার ও প্যাকেটের গায়ে মূল্য না থাকায় ডায়মন্ড সেমাই কারখানাকে ২ লাখ টাকার জরিমানা করে। তাছাড়া মূল্য তালিকা না থাকায় দুই গরুর মাংস বিক্রেতাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া মঙ্গলবার নগরের কর্ণফুলী সিডিএ মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে মূল্য তালিকা না থাকা এবং অননুমোদিত কসমেটিক্স বিক্রির অভিযোগে পাঁচটি দোকানকে ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) গালিব চৌধুরী এ অভিযান পরিচালনা করেন। মঙ্গলবার রাজাখালী এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি করায় মেসার্স এমরান সেমাই ফ্যাক্টরিকে ২০ হাজার, রফিক ফুড প্রোডাক্টসকে ৬০ হাজার এবং সূর্য সেমাই ফ্যাক্টরিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এ জরিমানা করে। গত সোমবার নগরের দুই নম্বর গেট এলাকার রাজবাড়ি রেস্টুরেন্টকে এক দিন আগের অবিক্রীত জিলাপি বিক্রি এবং নতুন জিলাপিতে হাইড্রোজ ব্যবহার করায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তাছাড়া, জান্নাত রেস্টুরেন্টকে ইফতার সামগ্রী ছাপানো নিউজপ্রিন্টের ওপর রাখার অপরাধে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকায় ফ্রেশওয়ে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড নামের একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেকারি পণ্য উৎপাদন, বিএসটিআইর লাইসেন্স না থাকা এবং বিভিন্ন কোম্পানির নামে পণ্য উৎপাদন করার অভিযোগে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এভাবে প্রতিদিনই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু থামছে না অনিয়ম।