রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বেনারসি নামে ভারতীয় শাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

বেনারসি নামে ভারতীয় শাড়ি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টায় এক সময় গড়ে উঠেছিল বেনারসি পল্লী। প্রায় সারা বছর ওই পল্লীতে তাঁতের ঠকঠাক শব্দ শোনা যেত। এখন বেনারসি পল্লীর সেই ঠকঠাক শব্দ নেই। তবে বেনারসির নাম ভাঙিয়ে বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে জমজমাট ভাবে। এখানকার ঐতিহ্যবাহী বেনারসি শাড়ির নাম ব্যবহার করে তারা ভারতীয় এবং ঢাকার মিরপুরের শাড়ি বিক্রি করছে। নানান নামের বেনারসির ওই শোরুমগুলোর আলোর ঝলকানিতে ক্রেতাদের চোখ ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল। নগরীতে, বুড়িরহাটে এবং গজঘণ্টা এলাকায় ওইসব শোরুম অবস্থিত। সরেজমিনে বেনারসি পল্লী গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের তালুক হাবু গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, হাতে গোনা ৫-৭ জন এই ব্যবসাটিকে কোনো রকমে আগলে রেখেছেন। একযুগ আগে হাবু তালুক গ্রাম বেনারসি তাঁতের ঠকঠাক শব্দে মুখর থাকলেও এখন অনেকটা নীরব ওই গ্রাম। তবে বেনারসিকে ঘিরে শহরে, গজঘণ্টা ও বুড়ির হাট এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় বড় কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওই সব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতারা শাড়ি ক্রয় করতে গেলে তাদেরকে বলা হয় এসব শাড়ি বেনারসি পল্লীতে প্রস্তুত। প্রকৃতপক্ষে ওই সব শাড়ি ভারতীয় অথবা ঢাকার মিরপুরে তৈরি। সচেতন মহলের মতে এটা ক্রেতাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। বিক্রেতারা ঢাকা ও ভারতীয় শাড়ি হিসেবে বিক্রি করলে তেমন কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তারা ওই সব শাড়িকে বেনারসি পল্লীর শাড়ি বলে বিক্রি করছে। এটা সরসরি প্রতারণা বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তারা এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আনুমানিক ২০০০ সালের দিকে প্রায় ১২০-১৩০টি তাঁত দিয়ে ওই এলাকায় বেনারসি পল্লী গড়ে তোলা হয়। তালুক হাবু গ্রামসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামে এই তাঁত শিল্পের বিস্তৃতি ঘটে। ৫০০ বেশি তাঁতে ৩ থেকে ৪ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করত। এক দশক আগেও হাবু গ্রামের প্রায় সবাই বেনারসির সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও কারিগর-শ্রমিকের পদচারণায় মুখর ছিল বেনারসি পল্লী। কিন্তু শ্রমিক সংকট, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, স্থানীয় ভাবে সুতা না পাওয়া, ডাইং মেশিন না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যায় এই শিল্পটি হোচট খেতে থাকে। ফলে অনেক তাঁত শিল্পী ঝরে পড়েছেন। এখানকার উৎপাদিত শাড়ির ধরন বা নকশার ওপর ভিত্তি করে ব্রোকেট কাতান, পিরামিড কাতান, মিরপুরি রেশমি কাতান, বেনারসি কসমস, চুনরি কাতান, প্রিন্স কাতান ইত্যাদি নামকরণ করা হয়ে থাকে। মূল্য দেড় হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে একেকটি শাড়ির। হাবু গ্রামের তাঁতি আকতারুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্য ধরে রাখতেই তিনি এখনো তাঁতের এই ব্যবসাটি ধরে রেখেছেন। তার ৪টি তাঁত রয়েছে। পরিবারের চারজন সদস্য তাঁতে কাজ করছেন। তিনি বলেন হাতে গোনা ৪-৫ জন এই পেশা ধরে রেখেছেন। এখানকার শোরুমগুলোতে বেনারসি পল্লীর শাড়ি বলে যা বিক্রি করা হচ্ছে সে সব শাড়ি ভারতীয় অথবা ঢাকার মিরপুরের। তারা ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।

বেনারসি পল্লীর প্রথম উদ্যোক্তা আবদুর রহমান বলেন, সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা তারা পাননি। এ ছাড়া সুতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। ডাইং মেশিন না থাকায় শাড়ি তৈরি করে তাদের ঢাকায় গিয়ে ডাইং করাতে হয় এতে খরচ ও সময় দুটোই ব্যয় হয়। ফলে বেনারসি পল্লীর অনেকেই ব্যবসা পরিবর্তন করেছেন। তিনি ৮-১০টি তাঁত দিয়ে কোনোরকম ব্যবসাটিকে ধরে রেখেছেন। এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রংপুরের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন বলেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর