বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাঙাচোরা বগুড়া এখন চকচকে

দীর্ঘদিনের দাবির পর ১ হাজার ৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

ভাঙাচোরা বগুড়া এখন চকচকে

বগুড়ায় এবার উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে প্রায় ১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব উন্নয়ন প্রকল্পে ভাঙাচোরা ও এবড়োখেবড়ো সড়কের চিত্র পাল্টে হয়ে গেছে চকচকে। বগুড়া সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার অধিকাংশ সড়ক ছিল ভাঙা, এবড়োখেবড়ো। এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য বড়ই কষ্টসাধ্য। ভাঙা সড়কে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হতো সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে এলাকাবাসীর ছিল নানা অভিযোগ।

নানা জটিলতা শেষে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ, আধুনিক সড়ক নির্মাণসহ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে সংযোগ সড়ক ১.৮৫ কিলোমিটার। এ সড়ক নির্মাণে সরকারকে বেশ কিছু মূল্যবান জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। সড়ক নির্মাণের চেয়ে জমি অধিগ্রহণ খরচই বেশি পড়েছে। রোগী দুর্ভোগ ও মহাসড়কে চাপ কমাতে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে সংযোগ সড়কের দাবি তোলে বগুড়াবাসী। বর্তমান সরকার বিভিন্ন উন্নয়নের ধারায় সড়কটি নির্মাণ করছে। বগুড়া সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি আধুনিক হবে। প্রায় ৪৫ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে সব রকমের রোড মার্কিং, প্রয়োজন অনুসারে সেতু ও কালভার্ট, দুই পাশে ড্রেন হবে। ২০২৩ সালের জুনে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বগুড়া সদর থেকে সারিয়াকান্দি, গাবতলী, সোনাতলা উপজেলাবাসীর জন্য ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হচ্ছে সড়ক। নির্মাণ করা হচ্ছে বাঙালি নদীর ওপর আড়িয়ারঘাট সেতু। চেলোপাড়া থেকে সারিয়াকান্দি পর্যন্ত সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়কটি সরু হওয়ায় নানা দুর্ভোগের শিকার হতো এ পথে যাতায়াতকারী কয়েক লাখ মানুষ। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙা, গর্ত, পিচপাথর উঠে যাওয়ায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি হলেই পথচারীদের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না।

২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারিয়াকান্দিতে বানভাসিদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে সড়কটি সংস্কারের ঘোষণা দেন। ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণে অনুমোদন দেওয়া হয় একনেকে। এ প্রকল্পে সোনাতলা উপজেলার আড়িয়ারঘাটে বাঙালি নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। আড়িয়ারঘাটের বেইলি ব্রিজটি সরিয়ে সেখানে ঢালাই সেতু নির্মাণ করা হয়। বগুড়া-নওগাঁ সড়কে সংস্কারকাজ শেষের পথে। এ সড়ক দিয়ে জেলার কাহালু, দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি উপজেলা হয়ে নওগাঁয় সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। বগুড়া শহরের চার মাথা থেকে নওগাঁর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কটি প্রায় ৪৩ কিলোমিটার। এ সড়কটিতে বাস-ট্রাকসহ যানবাহনের চাপ বাড়লে এলাকাবাসীর দাবির মুখে সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রায় ২২৭.৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার শেষ হয়েছে। বগুড়া-নাটোর সড়কের বগুড়া অংশ ছিল মরণফাঁদ। সেটি সংস্কার করে প্রায় ৩২ কিলোমিটার করা হয়েছে চকচকে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৮৪ কোটি টাকা। প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়া-জয়পুরহাট সড়কের উন্নয়নকাজও শেষ হয়েছে। ১৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়ার তালোড়া-ওমরপুর-দুপচাঁচিয়া-আক্কেলপুর, কাথমন্ডকালীগঞ্জ ৬৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার হয়েছে। বগুড়া জেলা শহরের ফতেহ আলী সেতুর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এ সেতু নির্মাণ হলে বগুড়ার পূর্ব অংশের তিনটি উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে। পূর্ব বগুড়ার কৃষিপণ্য সরাসরি ঢাকা, বগুড়া ও চট্টগ্রামে পরিবহন করা যাবে।

বগুড়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান জানান, সারিয়াকান্দি-বগুড়া, মেডিকেল থেকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, বগুড়া-নাটোর, বগুড়া-জয়পুরহাট, বগুড়া-নওগাঁ, ফতেহ আলী ব্রিজসহ বেশ কিছু আঞ্চলিক সড়ক নির্মিত হয়েছে। এতে আনুমানিক ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর