বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের বাণিজ্য। কয়েক মাসের স্থবিরতা কাটিয়ে দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বেড়েছে পণ্য আমদানি-রপ্তানি। সর্বশেষ মার্চ মাসে ফেব্রুয়ারির চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ নোঙর করেছে ২০ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা- এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই পুরনো ধারায় ফিরবে দেশের বাণিজ্য। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে বন্দরে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। তাই কনন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ বাড়ছে। আগামীতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।’ চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। মার্চে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চলতি মাসেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।’ চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ নোঙর করে ৩৭৫টি। যা এর আগের মাসের চেয়ে ২০ শতাংশেরও বেশি। এ সময় কার্গো হ্যান্ডেলিং হয় ১ কোটি ১৫ লাখ ৫ হাজার ২২ মে টন এবং কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয় ২ লাখ ৩৮ হাজার ১৯৫ টিইইউএস। ফেব্রুয়ারিতে নোঙর করে ৩১২টি জাহাজ। এ মাসে কার্গো হ্যান্ডেলিং হয় ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৭৭৯ মে টন কার্গো এবং কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৪০ টিইইউএস। জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে ৩৪৩টি জাহাজ। এ সময় বন্দর দিয়ে হ্যান্ডেলিং হয় ৯১ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৭ মে টন কার্গো এবং ২ লাখ ২১ হাজার ৮৫৬ টিইইউএস কনটেইনার।
বন্দরের ব্যস্ততা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়েও। মার্চে ১ লাখ ৭৭ হাজার আমদানি-রপ্তানি শুল্ক নথির বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টমস রাজস্ব আয় করেছে ৫ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এর আগের দুই মাস ফেব্রুয়ারি এবং জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা এবং ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি। জানা যায়, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মারাত্মক আঘাত হানে। এর মধ্যে দেশের ডলার সংকট এবং নানামুখী অর্থনৈতিক সমস্যা শুরু হলে গত বছরের অক্টোবর থেকে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি। এ সময় সরকার বিলাসবহুল পণ্যসহ কিছু পণ্য এলসি খোলা নিয়ে বিধি-নিষিধ জারি করে। ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এলসি ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশিত এলসি খুলতে পারেনি। এতে ধাক্কা খায় দেশের আমদানি-রপ্তানি। সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা ও রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিসেম্বর থেকে দেশের আমদানি-রপ্তানির পালে ফের হাওয়া লাগে। এরপর বাড়তে থাকে বাণিজ্যের পরিমাণ। সর্বশেষ মার্চ মাসে দেশে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।