বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রকৃতির বৈরিতার প্রভাব হালদায়

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

প্রকৃতির বৈরিতার প্রভাব হালদায়

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর পানিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। দেখা নেই বৃষ্টির। গরমের তাপমাত্রাও বেশি। এখন যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোচা। প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশে ভর করেছে হালদা নদীর ওপর। ফলে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে না নদীটির মা মাছ। চলতি মৌসুমের একটি জো চলে গেলেও ডিম ছাড়েনি। তাছাড়া, ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ায় তৈরি হয়েছে শঙ্কা। অভিযোগ আছে, প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ হালদা নদীর ওপর নানাভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ দ্বারা ভরাট করা হয়েছে নদীর কুম (নদীর গভীরতা)। ভূজপুর রাবার ড্যাম ও নদীর বিভিন্ন শাখা খালের স্লুইস গেটে পানি প্রবাহে তৈরি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। কমছে নদীর গভীরতা। এসব কারণে হালদা নদী হারাচ্ছে নিজস্ব স্বকীয়তা। নষ্ট হচ্ছে নদীর পরিবেশ। ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে না মা মাছ। জানা যায়, বছরের এপ্রিল-জুন মাস হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন মৌসুম। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে বজ্রসহ মুষলধারে বৃষ্টি হলে, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্রোতে পানির তাপমাত্রা কমে (২৭-২৯) ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বিভিন্ন ভৌত এবং রাসায়নিক প্যারামিটারের মিথস্ক্রিয়তা তৈরি হলে হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশে মা মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত অমাবস্যার জো’তে ডিম ছাড়েনি।

আগামী ১৬ থেকে ২১ মে পর্যন্ত আরেকটি অমাবস্যার জো শুরু হবে। তাছাড়া জুন মাসেও আছে দুটি জো। ডিম সংগ্রহকারীরা এসব জো এর অপেক্ষায় আছে।

প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, এপ্রিল মাসের জো চলে গেল। কিন্তু আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় মা মাছ ডিম ছাড়েনি। চলতি মে মাসেও একটি জো আছে। আশা করছি, ওই জোতে বৃষ্টি হলে অনুকূল পরিবেশ পেলে মা মাছ ডিম ছাড়বে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, গত ২ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত জো চলছে। আশা করছিলাম এরই মধ্যে বৃষ্টি হলে মা মাছ ডিম ছাড়বে। কিন্তু এখন প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশ ভর করেছে হালদার ওপর। পানিতে লবণের মাত্রা বেশি, দেখা নেই বৃষ্টির, চলছে তীব্র দাবদাহ। এখন যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড় মোচা। ঐতিহ্যগতভাবেই ঘূর্ণিঝড়ের সময় হালদার মা মাছ ডিম ছাড়ে না। তাই এখন প্রকৃতির আচরণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ডিম আহরণের জন্য আমাদের সংগ্রহকারীরা প্রস্তুত। এরই মধ্যে ডিম ফুটানোর কুম প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালো থাকলে আশানুরূপ ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় আছি।

জানা যায়, গত এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই প্রায় ৫০০ ডিম সংগ্রহকারী অন্তত ৩০০ নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহে প্রস্তুতি নিয়ে আছেন। নদীর হাটহাজারী ও রাউজানের বিভিন্ন অংশে ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা, বাঁশের ভেলা, থালা-বাসন-বালতি এবং জাল, নোঙরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে অপেক্ষায় আছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর