বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই বছরের কমিটিতে ১০ বছর

বিয়ে করেছেন ৮০ শতাংশ নেতা, বেশির ভাগের ছাত্রত্ব শেষ

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

দুই বছরের কমিটিতে ১০ বছর

দুই বছরের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি হয় ২০১৩ সালের অক্টোবরে। দুই বছরের সেই কমিটি ১০ বছরে পা দেবে আর পাঁচ মাস পর। এর মধ্যে কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ ৮০ শতাংশ নেতা বিয়ে করে সংসারি হয়েছেন। অধিকাংশের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চারবার নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ নেই।

দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালনের কারণে কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বারবার স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। দল ও সাংগঠনিক কর্মকান্ড নিয়ে তেমন মনোযোগ নেই নেতাদের। প্রত্যেকে যার যার অনুসারী তৈরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, তদবিরসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডন্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। নিজেদের মধ্যে বিবেদ বিভক্তি চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। অধিকাংশ নেতা কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন। অতীতে ছাত্রলীগ করে বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে উঠে আসা একাধিক নেতার ভাষ্য, দীর্ঘদিন কমিটি পরিবর্তন না হলে রাজনৈতিক কর্মকান্ড ঝিমিয়ে পড়ে। এই কমিটির ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। সদ্য অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনেও ছাত্রলীগের তেমন কোনো কর্মকান্ড চোখে পড়েনি। আগামী সংসদ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়তে পারে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের এসব বক্তব্যের সত্যতা ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনেও ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের বিভক্ত গ্রুপগুলো। আর মূল কমিটির নেতারা একটি কেক কেটেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আয়োজনের দায় সারেন। একাধিক সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদকের নেতৃত্বে নগরের পৃথক এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প, খাবার বিতরণসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। এ ছাড়া নগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কিছু রুটিন কর্মসূচি ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিশীল রাজনৈতিক কর্মকান্ড কিংবা কর্মসূচি চোখে পড়ে না। আবার রুটিন অনুষ্ঠানগুলোতেও সভাপতি-সম্পাদক ও তাদের অনুসারী নেতা-কর্মীরা ছাড়া ২৯১ সদস্যের বাকি নেতাদের দেখা যায় না। বেহাল এই অবস্থার কথা স্বীকার করে নগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রেজাউল আলম রনি বলেন, ‘কেউ আর সংগঠনে মনোযোগী না। এসবের জন্য কোনো জবাবদিহিতাও নেই। কমিটি করার জন্য কেন্দ্রকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ সন্তোষজনক উদ্যেগ নেননি।’ আরেক সহসভাপতি নাজমুল হাসান রুমি বলেন, ‘সবার বয়স হচ্ছে। পরিবার পরিজন হচ্ছে। ভরণ পোষণের ব্যাপার আছে। বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই সংগঠনের পাশাপাশি অন্যদিকেও সময় দিতে হচ্ছে। কেন্দ্র চাইলে তো যে কোনো মুহূর্তে নতুন কমিটি দিতে পারে।’

কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির আগের কমিটি চট্টগ্রামের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল। চট্টগ্রামের নেতারা ঢাকায় গিয়ে নেতাদের সঙ্গে সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে আলাপও করেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে কেন্দ্রের কমিটি পরিবর্তন হওয়ায় বিষয়টি আর এগোয়নি।’

চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্র নেতারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা আন্দোলনে বন্দর নগরীর ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ছাত্রলীগের এই দৈন্যদশা দেখে যারা ছাত্র রাজনীতিতে আসতে চায় তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করে। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় যেসব ছাত্রছাত্রী রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী তাদের জন্য কোনো প্ল্যাটফরম নেই। এর দায় শুধু নগর ছাত্রলীগের নয়। বরং কেন্দ্র কী কারণে এত বছরেও কমিটি নবায়ন করেনি তাদের প্রশ্ন করা উচিত।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর