রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাথার ওপর তারের জঞ্জাল

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

মাথার ওপর তারের জঞ্জাল

ডিজিটালাইজেশনের এই ক্ষণে ময়মনসিংহ নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিতে-গলিতে বিদ্যুতের খুঁটিতে তারের জঞ্জাল। বিদ্যুতের এসব খুঁটিতে ক্যাবল অপারেটর, ইন্টারনেট ও টেলিফোনের লাইন অন্ত্রের নাড়ির মতো জট পাকিয়ে আছে। এসব তারের মধ্যে কোনটির কী কাজ তা সাধারণভাবে বোঝারও উপায় নেই। যে যেভাবে পেরেছে, বাসা-অফিসে সেভাবে টেনে নিয়েছে তারের সংযোগ। কোথাও কোথাও তার ছিঁড়ে ফুটপাতের ওপর পড়েছে। অভিযোগ আছে বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমতি ছাড়াই বিদ্যুতের খুঁটিতে বিভিন্ন মাধ্যমের তার টানা হচ্ছে। নগরীতে সড়কের ওপর ঝুলে থাকা এসব তার থেকে যত্রতত্র আগুন লাগারও ঘটনা ঘটছে। গেল রমজানে এসব তারের জটলা থেকে ব্যস্ততম ও বাণিজ্যিক এলাকা গাঙ্গিনাপার ট্রাফিক মোড় ছাড়াও বিদ্যাময়ী স্কুল, পালিকা শপিং সেন্টারের সামনে ও সানকিপাড়ায় বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন লাগে। এতে করে সব কিছুর সংযোগ যেমন বিচ্ছিন্ন হয় তেমনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় উদ্বিগ্ন থাকতে হয় নগরবাসীকে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বিদ্যুতের খুঁটিতে তারের জঞ্জালের কারণে শম্ভুগঞ্জ পশ্চিম বাজারে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে একটি দোকান পুড়ে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এ ছাড়াও একই মাসের ২০ তারিখে নগরীর বড় বাজার এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, পুরনো লাইন ও অবৈধ সংযোগের যেই জঞ্জাল তৈরি হয়েছে তা থেকে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের সাবধান করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চরপাড়া মোড়, গাঙ্গিনারপাড় মোড়, নতুনবাজার, টাউনহল, জিলাস্কুল মোড়সহ প্রত্যেকটি মোড়ের বিদ্যুতের খুঁটিতে তারে সয়লাব। কেউ কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে যে যার মতো তার টানিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। তারের এমন ছড়াছড়ির ফলে একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে নগরের সৌন্দর্য অন্যদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে দুর্ঘনার ঝুঁকি। এসব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দীন ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তারের এমন জড়াজড়ি নতুন নয়, ১০ বছর আগেও ছিল, এখনো আছে। বরং আগের চেয়ে এখন তারের প্যাঁচ বাড়ছে দিনকে দিন। এমন সমস্যায় কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।’

জানতে চাইলে ক্যাবল ময়মনসিংহ অপারেটরের পরিচালক ও কাউন্সিলর ফরহাদ আলম বলেন, ‘আমাদের মাত্র একটি তারের মাধ্যমে লাইন যাচ্ছে। কিন্তু ২০ থেকে ৩০টি ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের তার ঝুলছে প্রতিটি খাম্বায়। আমি মনে করি ইন্টারনেটের তারই প্রধান সমস্যা।’ ইন্টারনেট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক কাজী সাজ্জাদ হোসেন রতন বলেন, তার টানার মূল কাজটি এনটিটিএন নামক একটি প্রতিষ্ঠানের। এই প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়ভাবে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকে। মূলত তাদেরই দায়িত্ব মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ তার নেওয়ার। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় সব তার সরিয়ে ফেলার জন্য।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মাটির নিচ দিয়ে লাইন নেওয়ার একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা সেটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর