শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

আশঙ্কায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান

সরকারি দামের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বিক্রিতে আগ্রহ নেই সংশ্লিষ্টদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

আশঙ্কায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান

রংপুর বিভাগে আমন মৌসুমের মতো এবার বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমনে বিভাগের আট জেলার মধ্যে সাতটিতেই ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের হার শূন্যের কোঠায় ছিল। এ ছাড়া চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি কোনো জেলাতেই। ধান-চাল সরকারি মূল্যে বিক্রি করলে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠছে না। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারদর বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও সরবরাহ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই এবারও রংপুর বিভাগে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হবে বলে মনে করছেন রংপুরের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, আমনের পর এ বছর বোরো মৌসুমেও বাম্পার ফলন হয়েছে। এবারের বোরো মৌসুমে আমনের চেয়ে দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা বাড়িয়ে ৩০ এবং চালের দাম বাড়িয়ে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে সরকারিভাবে ধানের নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক খাদ্য গুদামে চাল বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ ছাড়া লাভ না হওয়ায় চালকল মালিকরাও নির্ধারিত দামে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে চান না। ফলে এ মৌসুমেও ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রংপুর বিভাগে এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৭ হাজার মেট্রিক টন এবং চালের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন।

গত আমন মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় এক ছটাক আমন ধান কিতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। শুধু দিনাজপুর জেলায় মাত্র ৩ মেট্রিক টনের কিছু ওপরে ধান কিনেছে। এ ছাড়া চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভাগের আট জেলার কোনোটিতেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ পড়ছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। ১ বিঘা জমির ধান সরকারি মূল্য ১০ হাজার টাকার কিছু ওপরে। সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করলে কৃষকের বিঘাপ্রতি লোকসান হবে দেড় হাজার টাকার ওপরে। অন্যদিকে চাল ব্যবসীয়দের প্রতি কেজিতে আর্থিক ক্ষতি হবে ৩ থেকে ৫ টাকা।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের চাষি বুলবুল ইসলাম বলেন, ১ বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় ১২ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে জমির আইল কাটা বাবদ ৫০০, জমি চাষে ১ হাজার ৫০০, রোপণ বাবদ ২ হাজার ১০০, নিড়ানি বাবদ ১ হাজার ৫০০ ও সার ৭০০-৮০০ টাকা। এ ছাড়া কীটনাশক স্প্রে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ও ধান কাটা-মাড়াই ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে ১ বিঘা জমিতে খরচ হয় কৃষকের ১২ হাজার টাকার ওপর। ১ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হয় ৮- ৯ মনের মতো। সরকার এবার ধান কিনবে ৩০ টাকা কেজি দরে। সরকারি মূল্য অনুযায়ী ১ বিঘা জমির ধানের মূল্য ১০ হাজার টাকার কিছু বেশি। সরকারি মূল্যে গোডাউনে ধান দিয়ে কৃষকের লাভ দূরের কথা, উৎপাদন ব্যয়ও উঠছে না। বিঘায় ১ হাজার থেকে প্রায় দেড় হাজার টাকা কম পাবে কৃষক উৎপাদন খরচের চেয়ে। তাই এবার সরকারি গোডাউনে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার চালের মূল্য ধরেছে ৪৪ টাকা কেজি। অথচ ১ কেজি চাল উৎপাদনে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের খরচ পড়ে ৪৬-৪৭ টাকা। এ ছাড়া বর্তমানে বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। বাজারদরের চেয়ে ৫-৭ টাকা কম সরকারি মূল্য হওয়ায় কোনো ব্যবসায়ী চাল দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। গত আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষক ও মিলাররা ধান সরবরাহে আগ্রহ না দেখানোয় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে রংপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোয়।

রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. আসরাফুল আলম বলেন, ১৮ মে পর্যন্ত মিলারদের সঙ্গে চুক্তি হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবার ধান-চাল সংগ্রহ সফল হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর