চলতি বছরে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঢাকার বাইরে দেশের ৪৪ জেলায় ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। গত বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি। শঙ্কা বাড়াচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এর মধ্যেই মারা গেছে ১৩ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ কীটতত্ত্ববিদদের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ধরনটা একটু ভিন্ন। জানুয়ারি মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শুরু হয়েছে। প্রতি বছর মে মাসে যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হতো, এবার তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আক্রান্ত হয়েছে। তাই দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় খারাপের দিকে যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল বিভাগের দু-একটা জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়তে পারে। তাই এডিস মশার উৎসস্থল নির্মূল করতে হবে। নগরবাসীকে সিটি করপোরেশনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। করপোরেশনের উচিত আক্রান্ত রোগীর এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৬২৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছর এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৭৮ জন। দেশের ৪৪টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। তবে আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি, কারণ আক্রান্ত সবাই হাসপাতালে ভর্তি হন না। আবার স্বাস্থ্য অধিদফতর ভর্তি রোগীর যে তথ্য দেয়, তা কেবল ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ৪১টি হাসপাতাল এবং বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাঠানো হয়।স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে দেখা গেছে, হাসপাতালে এ বছর জানুয়ারি মাসে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩ এবং মে মাসের ২৬ দিনে ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছে ৬৩৮ জন। জানুয়ারি মাসে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন এবং মে মাসে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ২৬ মে পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল ২৮৯ জন। তবে গত বছর ওই সময় পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
এ অবস্থায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গুরোগী বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদফতরের। রোগীর চাপ কমাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অন্য বছরের এ সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়নি। সে জন্য আমরা মনে করি আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও আছেন। আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক ব্যবস্থাপনার কাজ আরও জোর দিয়ে করা গেলে এ বছর যে ভয়ভীতি সেটি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। গত বছর যে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু হয়েছে তাও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।’