মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

মৃত্যুকূপ ৬৯ অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং

জীবনহানিসহ ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

মৃত্যুকূপ ৬৯ অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং

খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত ১৭২টি রেলগেটের ৬৯টিই অনুমোদনহীন। তার ওপর ১০৩টি বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের ৪০টিতে কোনো গেটম্যান নেই। এ ছাড়া রেললাইনের ৬৯টি স্থানে রাস্তা তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুকূপের ওপর দিয়েই মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। ফলে বিপজ্জনক ৬৯টি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায় ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। জানা যায়, সর্বশেষ ২৮ মে খুলনার ফুলতলা পথেরবাজার রেলক্রসিং অতিক্রমের সময় ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকারের তিন যাত্রী ভাগ্যক্রমে প্রাণে রক্ষা পায়। পুলিশ জানায়, রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল পাশা প্রাইভেটকারযোগে (ঢাকা-মেট্রো-গ-৪২-৪৭৬৩) তার ছেলে জুবায়েরকে নিয়ে ফুলতলা মিলিটারি কলেজিয়েট স্কুলে যাচ্ছিলেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পথেরবাজার রেলক্রসিং অতিক্রমের সময় খুলনাগামী ট্রেন সাগরদাঁড়ী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় প্রাইভেট কারটি ছিটকে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় প্রাইভেটকারের চালকসহ তিন যাত্রী আহত হয়।

এর আগে ৮ মে ভোর ৪টার দিকে গিলাতলা আফিলগেটের সামনে লেভেল ক্রসিংয়ে খুলনাগামী ট্রেন রকেট মেইলের ধাক্কায় পিকআপের হেলপার আফজাল হোসেন নিহত হয়। পিকআপচালক নুর শেখ গুরুতর আহত হন। খুলনা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা খবির আহমেদ জানান, দুর্ঘটনাকবলিত পিকআপটি বাইপাস সড়কের রেললাইনের ওপর ছিল। খুলনাগামী ট্রেন ওই পিকআপকে ধাক্কা দেয়। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে কোনো গেটম্যান ছিল না। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।  খুলনা রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, খুলনা স্টেশন থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত বৈধ রেলগেট আছে ১০৩টি। এর মধ্যে খাতাকলমে ৬৩টিতে গেটম্যান আছে। গেটম্যানবিহীন রয়েছে ৪০টি। জানা যায়, গেটম্যান থাকা বৈধ রেলগেটে জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার ফলে সময়মতো অনেকে ডিউটি পালন করেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সময় গেটম্যানকে খুঁজেও পাওয়া যায় না।

এ ছাড়া খুলনা-যশোর রেললাইনের ৬৯টি স্থানে রাস্তা তৈরি করে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে মানুষ। এখানে কোনো গেটম্যান, লেভেল ক্রসিং, সংকেতবাতি ও ঘণ্টা কিছুই নেই। ফলে ট্রেন কখন আসছে বা যাচ্ছে, তা বোঝা মুশকিল। খুলনা থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত ২টি, দৌলতপুর থেকে যশোর ৫৭টি ও যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ১০টি স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচলের রাস্তা রয়েছে।

এদিকে রেল কর্তৃপক্ষ অবৈধ গেটে সাইনবোর্ড টানিয়ে ‘এটি অবৈধ লেভেল ক্রসিং গেট, এ স্থান দিয়ে সব প্রকার যানবাহন চলাচল নিষেধ’ লেখা সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ রেলগেট থেকে যানবাহন চলাচলে দুর্ঘটনার শঙ্কাও বাড়ছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে যশোরের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালি-উল হক তমাল বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে অবৈধ গেট চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বা ওই এলাকায় মানুষ নিজের চলাচলের জন্য অবৈধভাবে রেল লাইনের ওপর পথ তৈরি করেছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) সূত্রে জানা যায়, খুলনায় বিভিন্ন রেল দুর্ঘটনায় বছরে প্রায় ৪০-৪৫ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে রেলে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যাই বেশি।

এদিকে, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বৈধ গেটে গেটম্যানসহ সংকেতবাতি, ঘণ্টাসহ নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ গেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর