বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে বরিশালসহ পাঁচ সিটির মেয়রদের শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। সিটি করপোরেশনের চতুর্থ পরিষদের মেয়াদ শেষে নবনির্বাচিতরা আগামী ১৪ নভেম্বর পঞ্চম পরিষদের দায়িত্ব নেবেন তারা। শপথ অনুষ্ঠানে সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকসহ তিনজন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
শপথের পর এখন নতুন মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পালা। আগামী ১৪ নভেম্বর দায়িত্ব নেবেন নতুন মেয়রসহ কাউন্সিলররা। দায়িত্ব গ্রহণের আগেই নির্বাচনের পূর্বে নতুন মেয়রের দেওয়া উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। শপথ নেওয়া বিসিসি ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সামজেদুল কবির বাবু জানান, প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিজ এলাকায় যা যা উন্নয়ন প্রয়োজন তার তালিকা করে মেয়রের কাছে দিতে বলেন। উন্নয়নের চাহিদা যথাযথ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয়ে এলে সেগুলো বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে নতুন পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণের আগেই নবনির্বাচিত মেয়রের নির্বাচন পূর্ববর্তী ৩৫টি প্রতিশ্রুতি নিয়ে নগরবাসীর মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন মেয়র আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করবেন বলে প্রত্যাশা নাগরিক সমাজের। নির্বাচনের আগে গত ৭ জুন নগরীর একটি কমিউনিটি হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত নতুন বরিশাল গড়তে ৩৫ দফা উন্নয়ন ইশতেহার ঘোষণা করেন। মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে জনবান্ধব নগরী বিনির্মাণ, অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনয়ন, ট্রেড লাইসেন্স সহজীকরণ করে অনলাইন সেবা চালু, বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন সহজীকরণ ও ভীতিমুক্ত করা, খালগুলো খননে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ, বর্ধিত এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়, সিটি করপোরেশন দুর্নীতিমুক্ত করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করে অসাম্প্রদায়িক নগরী প্রতিষ্ঠা, তরুণদের জন্য আইটি নগরী প্রতিষ্ঠাসহ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ইউএনডিপির অর্থায়নে পুনরায় সিডিসি কার্যক্রম চালু, শিশু বিকাশের জন্য বিনোদন কেন্দ্র ও পার্ক নির্মাণ, বরিশালকে শিল্প বাণিজ্য ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন করে নতুন বরিশাল গড়ার স্বপ্ন দেখান তিনি। ১২ জুনের নির্বাচনে ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর তার দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো সামনে উঠে এসেছে।বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি শিক্ষাবিদ প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, নির্বাচন চলার সময় নাগরিকরা যা আশা করেছিলেন এবং তিনি (খোকন সেরনিয়াবাত) যে প্রতিশ্রুতিগুলো নগরবাসীকে দিয়েছেন গুরুত্ব বিবেচনায় সেগুলো তিনি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করবেন সেটাই নাগরিকদের প্রত্যাশা।
এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র হিসেবে তৃতীয়বারের মতো শপথ গ্রহণ করেছেন তালুকদার আবদুল খালেক। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে খুলনা, বরিশাল ও গাজীপুরের নবনির্বাচিত তিন মেয়রকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে শপথ গ্রহণ করেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার খালেক বলেন, সিটি করপোরেশন কোনো একটা দলের জন্য নয়। সব দলের সব মতের মানুষের জন্যই কাজ করব। তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য পরিচ্ছন্ন, সুন্দর নগরী গড়ে তুলতে এবার পরিকল্পিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। খুলনার উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই।
তালুকদার খালেক বলেন, এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছেন। ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে কাজ শেষ করতে পারিনি। এখনো ২৫০-৩০০ রাস্তা, ড্রেন ও খালের কাজ চলমান। এই কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে কিংবা আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হবে। এই প্রকল্প শেষ হলে উন্নয়নের নতুন চিন্তাভাবনা করব।
চলমান কাজ শেষ হলে খুলনার দৃশ্যপট বদলে যাবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ইতোমধ্যে আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকার আলাদা জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবিলা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে, যেটা এখনো শুরু করা হয়নি। জাতীয় বাজেটেও এবার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা চলমান প্রকল্পে ধরা আছে।
তিনি বলেন, ৫০০ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ৩১২ কোটি টাকা ও জিওবির বাকি টাকা। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ড্রেনেজ সংস্কার, পাম্প হাউস, দৌলতপুর বাজার সংরক্ষণ, শহর রক্ষা বাঁধ, ২৪টি পুকুর খনন ও পার্ক নির্মাণ করা হবে।
নদী কেন্দ্রিক বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, এরই মধ্যে ময়ূর নদীর আট কিলোমিটার খননের টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নেদারল্যান্ড সরকারের সঙ্গে ময়ূর নদী খননের বিষয়ে আলোচনা চলছে। তারা ময়ূর নদী পুরাটা কাটবে ও দুই পাশে সুন্দর ওয়াকওয়ে নির্মাণ করবে।