কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানীর বনানীর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সদর দপ্তরের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডেটা সেন্টারও। এতে সারা দেশে যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানসহ বিআরটিএর সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এই কার্যক্রম কবে নাগাদ চালু হবে সেটিও অনিশ্চিত।
গত ১৮ জুলাই বনানী এলাকার বিআরটিএর সদর দপ্তরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। সেখানেই এসব পরিষেবা সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা সার্ভার ছিল। এ ছাড়া মিরপুরে বিআরটিএর প্রবেশের তিনটি গেটের মধ্যে দুটি গেটের পাশে থাকা ছোট ভবন দুটিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে পড়েছে পরিচালকের কার্যালয়। এ ঘটনায় আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই তদন্ত কমিটিকেই সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ভবনের পঞ্চম তলায় তথ্য কেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। ১ কোটি গাড়ির বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও প্রায় ৪৩ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স তথ্য এই ডাটা সেন্টারে ছিল। কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তথ্যের, সেটা তদন্তের পর বোঝা যাবে। পুরোটা প্রতিস্থাপন না করা পর্যন্ত বোঝা যাবে না। এখানে ১২টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান দপ্তরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সামনের খালি জায়গায় অস্থায়ী দুটি শামিয়ানা টানিয়ে। বিআরটিএ সারা দেশে ৭০টি সার্কেল অফিস থেকে ৫০টিরও বেশি ধরনের সেবা প্রদান করে এবং এর বেশির ভাগই অনলাইনকেন্দ্রিক।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া ১২টি গাড়ির কঙ্কাল পড়ে আছে। কার্যালয়জুড়েই আগুনে পোড়ানোর ক্ষতচিহ্ন। নিচতলাজুড়ে ভাঙচুরের চিহ্ন। ভেঙে ফেলা হয়েছে লিফটের বাটন ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্মচারীদের উপস্থিতি নেওয়ার মেশিন। কর্মকর্তারা জানান, আগুন দেওয়া হয়েছে ভবনের নিচে থেকে ষষ্ঠতলা পর্যন্ত। ভবনের পানি সরবরাহের লাইন, কন্ট্রোল রুমের এসি ও জেনারেটর, কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, সারা দেশে আমাদের সব ধরনের পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে এবং ডেটা সার্ভার পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতই থাকবে। কবে নাগাদ এসব পরিষেবা চালু হতে পারে তা বলতে পারেননি তিনি। বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, যানবাহন ও অন্যান্য জিনিসের ক্ষতি ছাড়াও আমাদের ভবন পুড়িয়ে দেওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গতকাল মিরপুরে বিআরটিএ সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মিরপুরের পরিচালকের কার্যালয় ও চারটি গাড়ি পুড়ে গেছে। আনসারদের দুটি বাইকও পুড়েছে আগুনে। বিআরটিএর দুটি গেটের পাশে থাকা ছোট ভবন দুটিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফলে ওই রুমে থাকা জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। প্রধান গেটের পাশে থাকা উপ-পরিচালকের ভবনের নিচের পার্কিংয়ে থাকা গাড়ি পুড়েছে। এখন আছে শুধুই কঙ্কাল। পরিচালন কার্যালয়ের প্রতিটি রুমের জানালার কাচ ভাঙা দেখা গেছে। নতুন ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টারের (ভিআইসি) ভিতরেও ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সেখানে ইন্সপেকশন মেশিনের ওপর থাকা একটি গাড়ির চেসিসেরে ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। এ ছাড়া প্রতিটি ইন্সপেকশন ডিভাইস ছিন্নভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এই অফিসে বিদেশ থেকে আমদানি করা মেশিনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা ছিল। ফিটনেস সনদ দেওয়ার জন্য দিনে ৭০টি গাড়ি পরীক্ষা করার সুযোগ ছিল। নতুন করে ফিটনেস সনদ দেওয়ার কার্যক্রম আবার কবে চালু করা যাবে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার পুড়ে যাওয়ায় প্রায় ২০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।