আবাসন শুধু মাথা গোঁজার স্থান নয়, এটি মানুষের নিরাপত্তা, মর্যাদা, স্বাস্থ্য ও জীবিকার ভিত্তি। এর জন্য মানুষের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জন্য সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও কার্যকর নীতি ছাড়া সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্য ঢাকাকেন্দ্রিক প্রকল্প থেকে সরে এসে সারা দেশে ভারসাম্যপূর্ণ আবাসন উন্নয়ন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব, ভাড়াভিত্তিক ও সাশ্রয়ী কর্মসূচি এবং রিয়েল এস্টেট খাতে সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স আয়োজিত বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে নগরে সবার জন্য নিরাপদ আবাসন শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ। আরও বক্তব্য দেন বিআইপি উপদেষ্টা পরিষদের উপসচিব পরিকল্পনাবিদ সালমা এ শফি, রিহ্যাবের সহসভাপতি প্রকৌশলী আবদুল লতিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. কাসফিয়া নাহরিন, বিআইপি কোষাধ্যক্ষ পরিকল্পনাবিদ ড. মু. মোসলেহ উদ্দীন হাসান ও বিআইপির সাবেক সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান।
মূল প্রবন্ধে আকতার মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সংবিধান নাগরিকের মানসম্মত গৃহায়ন নিশ্চিত করাকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করেছে। তবে বর্তমানে সরকার আবাসন প্রদানকারী নয়, বরং সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’ রিয়েল এস্টেট খাতের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই খাত দেশের জিডিপিতে ৭-৮ শতাংশ অবদান রাখলেও তা মূলত উচ্চবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আবাসন খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ভূমির অভাব, জমির উচ্চমূল্য, নির্মাণ ব্যয়ের বৃদ্ধি, সাশ্রয়ী ঋণের ঘাটতি এবং সরকারি পরিকল্পনার ধারাবাহিকতার অভাব।
আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের আগে আবাসনের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি নিম্ন আয়ের মানুষ। অথচ তাদের জন্য নিরাপদ আবাসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। তিনি আরও বলেন, নিরাপদ আবাসন রাষ্ট্রের দায়িত্ব হওয়া উচিত। সরকারের আবাসন নীতিমালায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত ২০ শতাংশ ইউনিট নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সংরক্ষণের বিধান থাকা প্রয়োজন।
বিআইপির সাবেক সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারি বা বেসরকারি উভয় উদ্যোগই এখন পর্যন্ত ‘সবার জন্য আবাসন’ ধারণা থেকে অনেক দূরে রয়েছে। বেসরকারি খাতের আবাসন কার্যক্রম মূলত উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য পরিকল্পিত। যেখানে মধ্যবিত্তদের জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে হোম লোনে বিশেষ সুবিধা না দিলে, সবার জন্য আবাসন বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।