আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালন সাঁইজির ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আজ শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী লালন উৎসব। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে পালিত হচ্ছে লালন উৎসব। এর মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে আখড়াবাড়ির মূল মঞ্চ সজ্জাসহ সাধুসঙ্গ ও গ্রামীণ মেলার মাঠ। মেলার জন্য তৈরি ও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০০টি স্টল। ইতোমধ্যে লালন ভক্ত-অনুসারীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে।
আখড়াবাড়িতে আজ সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আলোচনায় অংশ নেবেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। লালন দর্শন নিয়ে বক্তব্য রাখবেন লেখক ও গবেষক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। এ বছর আলোচনা পর্বে কোনো ফকির-সাধককে বক্তা হিসেবে রাখা হয়নি। এ নিয়ে কোনো ক্ষোভ প্রকাশ করেননি ফকির সাধকরা। উৎসবের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা।
লালন সন্ধ্যা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে : আধ্যাত্মিক সাধক লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় লালন সন্ধ্যা। ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
তিনি বলেন, লালন ফকির ১৩৫ বছর আগে না-ফেরার দেশে চলে গেলেও তাঁর দর্শন আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়। তাঁর বৈচিত্র্যময় চিন্তা ও দর্শন শুধু সংগীত নয়, জীবন বৈচিত্র্য, সমতা ও সরলতার প্রতীক। আমাদের দুই দেশের মধ্যে লালন একটা মৈত্রীর বন্ধন তৈরি করেছেন। তাঁর সংগীত আমাদের সীমানাহীন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছে। এ সময় তিনি সদ্য প্রয়াত লালনশিল্পী ফরিদা পারভীনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশে নিয়োজিত প্রথম ভারতীয় হাইকমিশনার মুচকুন্দ দুবে অনূদিত ফরিদা পারভীনের গাওয়া লালনের বিখ্যাত গান ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ এর হিন্দি অনূদিত ‘ঘার কি পাস আরশীনগর’ গানটির ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়। এরপর বাঁশিতে লালনের ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ গানটির ফিউশন পরিবেশন করেন গাজী আবদুল হাকিম। নাসরিন আক্তার বিউটি শোনান ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ ও ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, গান দুটি। এ ছাড়া ফরিদা পারভীনের হাতে গড়া সংগঠন অচিন পাখি সংগীত একাডেমির শিক্ষার্থীরা সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করে ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’, ‘মিলন হবে কত দিনে’, টুনটুন বাউল গেয়ে শোনান- ‘ঘরে রূপের বাতি জ্বলছেরে সদাই’, ‘বলো স্বরূপ’সহ বেশ কয়েকটি গান। সব শেষে আসরে সাঁইজির গানে মঞ্চ মাতান লালন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সুমি।