রংপুরে প্রতি বছর হাঁড়িভাঙা আম, আলু ও সবজি সংরক্ষণের অভাব এবং অজ্ঞতার কারণে মাঠেই নষ্ট হচ্ছে ৩ থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন। কৃষি অফিস বলছে এসব পণ্য সংরক্ষণের জন্য দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে কনটেইনার পদ্ধতি। অপরটি ইটের গাঁথুনি দিয়ে তাপ নিয়ন্ত্রণকক্ষ। এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আম এবং আলু নষ্টের পরিমাণ কমে যাবে। কৃষি অফিস ও কৃষিসংশ্ল্ষ্টি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ২ হজার হেক্টরের বেশি জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টনের ওপর। মৌসুমের শুরুতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং মৌসুমের শেষ দিকে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম ১৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হয়। ৪০০ কোটি টাকার বেশি আম বিক্রি হয়েছে। হাঁড়িভাঙা আম মোট ফলনের ১০-১৫ শতাংশ নষ্ট হয় সংরক্ষণের অভাবে। স্বাদের কারণে ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিশ্রিদানা, নীলাম্বরী, কালীভোগ, কাচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপুরী, কারাবাউ, কেউই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপুরী, পাহুতান, ত্রিফলা আমেরও ক্ষতি হয় থাকে সংরক্ষণসহ বিভিন্ন কারণে। এ ছাড়া শীতকালীন সবজির উৎপাদনের প্রায় ২৫ শতাংশ নষ্ট বা কম দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
এদিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে গতবার আলুর আবাদ হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৯ হেক্টর। এবার আলুর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ২৬ টনের বেশি হয়েছে। এই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টন আলুতে ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে সেই হিসেবে ৩২ লাখ মেট্রিক টন আলুতে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। এ ছাড়া সংরক্ষণসহ বিভিন্ন কারণে ৩ থেকে ৪ লাখ টন আলু নষ্ট হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৭১টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারের ধারণক্ষমতা সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন। দুই-একজন বড় কৃষক অথবা ব্যবসায়ী বাইরের জেলার হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করলেও হিমাগারের বাইরে রয়েছে ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন আলু। এসব আলু কৃষকরা নিজস্ব প্রদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে থাকেন। এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নষ্ট হয়ে যায়।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর এই অঞ্চলে কয়েক লাখ মেট্রিক টন আম, আলু ও শাকসবজি নষ্ট হয়। এর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই অঞ্চলে কোনো আমশিল্প নেই। আম দিয়ে আচার, আমসত্ত্ব ইত্যাদি তৈরির কোনো কারখানা নেই। অপরদিকে আলু উৎপাদনে এই অঞ্চল রেকর্ড করলেও এখানে কোনো আলুশিল্প নেই। চিপসজাতীয় কোনো পণ্য তৈরির কারখানা নেই এই অঞ্চলে। তিনি আরও বলেন সংরক্ষণ সমস্যা সমাধানে রংপুরে দুটি সংরক্ষণাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একটি হবে কনটেইনার পদ্ধতি। অপরটি হবে ইটের দেয়াল দিয়ে ঘর তৈরি করে তাপ নিয়য়ন্ত্রণকক্ষ। প্রাথমিকভাবে এই দুটি প্রকল্পের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে মিঠাপুকুর ও পীরগাছা উপজেলায়। আশা করছি খুব দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নবিষয়ক চিঠি পাব।’