নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রাহককে নির্ধারিত সীমার অনেক বেশি অর্থ বিদেশে খরচ করার সুযোগ দেওয়ায় ব্যাংক এশিয়াকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শনে ব্যাংক এশিয়া পিএলসির দুটি রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিটে (আরএফসিডি) অনিয়মের তথ্য পাওয়ায় এ জরিমানা করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংক এশিয়ার দুই অ্যাকাউন্টধারী ফারহানা করিম এবং আলাইনা চৌধুরী তাঁদের আরএফসিডি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার ডলার (২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা) বিদেশে স্থানান্তর করেছেন। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এ দুই গ্রাহক অনুমোদিত সীমার বেশি অর্থ জমা করেন এবং পরে ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে সেই অর্থ ব্যয় করেন। বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিধান অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশি নাগরিক প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিদেশে ব্যয় করতে পারেন। তবে আরএফসিডি হিসাবে জমাকৃত অর্থ পুরোটা বিদেশে ব্যবহার করা যায়। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরার সময় সঙ্গে আনা বৈদেশিক মুদ্রা যদি ১০ হাজার মার্কিন ডলারের কম হয়, তবে তা নিজের কাছে রাখা, ব্যাংকে বা অনুমোদিত মানিচেঞ্জারে বিক্রি করা, কিংবা আরএফসিডি হিসাবে জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ১০ হাজার ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনলে এফএমজে ফরমে ঘোষণা দেওয়া এবং দেশে আগমনের ৩০ দিনের মধ্যে তা ব্যাংকে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা নিয়মটি উপেক্ষা করে একই আরএফসিডি হিসাবে বারবার এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে নগদ ডলার জমা দিয়েছেন বিদেশে খরচের উদ্দেশ্যে, যা নিয়মের ব্যত্যয়।
ফারহানা করিম প্রায় এক বছর আগের বিদেশ ভ্রমণের তারিখ দেখিয়ে একাধিকবার, কখনো একই দিনে কয়েকবার ১০ হাজার মার্কিন ডলার বা তার বেশি এফএমজে ফরমে ঘোষণা ছাড়াই নগদ জমা দিয়েছেন। এসব লেনদেনে অন্য ব্যক্তি তাঁর হয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন, যা সব মিলিয়ে পরিমাণে দাঁড়ায় দেড় লাখ মার্কিন ডলারের বেশি। আলাইনা চৌধুরীর ক্ষেত্রেও একই অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। তিনি বিদেশে অবস্থানকালে অন্য একজনের মাধ্যমে ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার নগদ তাঁর আরএফসিডি হিসাবে জমা দিয়েছেন। পরে সেই ডলারও ওই হিসাবের বিপরীতে ইস্যুকৃত কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে খরচ করা হয়।
এ বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর এফ হোসেন বলেন, ‘এখানে অর্থ পাচারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ব্যাংকের ভুলে এমনটি হয়েছে। তাই ব্যাংক এশিয়াকে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর হবে না।’ এ ধরনের ঘটনা ব্যাংকিং খাতের ওপর জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর তদারকির আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।