চট্টগ্রাম মহানগরে বর্তমানে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১১টি ভবন আছে। এর ৭৫ শতাংশই ভূমিকম্পঝুঁকিতে। এ নিয়ে দায়িত্বশীল সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখা যায় না। বরং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে দুই সংস্থার উদাসীনতার অভিযোগ নগরবাসীর। এদিকে সিডিএ নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ৯৪টি ভবনের একটি তালিকা চসিককে দিয়েছে। কিন্তু সংস্থাটি কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ভবনগুলো ঝুঁকি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
নিয়মমতে সিডিএ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে চসিকের প্রকৌশল বিভাগে জমা দেয়। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভবন ভেঙে ফেলে। অভিযোগ আছে, নগরের অধিকাংশ ভবন নির্মাণে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মানা হয়নি। মানা হয়নি ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০২০। ব্যবহার করা হয়নি গুণগত মানসম্পন্ন নির্মাণসামগ্রী। নগরের ২৭টি সেবা সংস্থা থাকলেও তারা প্রয়োজনীয় তদারকি করে না। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাবেক উপাচার্য ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নিয়ে নতুন জরিপ করার সময় হয়েছে। অন্যথায় বড় কোনো বিপর্যয় ঘটলে তা মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। প্রয়োজনে ভবনগুলো ভেঙে মালিকদের শূন্য ইন্টারেস্টের লোন দিয়ে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।’ সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ‘সিডিএ নগরের বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে। ইতোমধ্যে নগরে ৯৪টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে চসিককে দেওয়া হয়েছে।’ চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতি সর্ববিদ্যা বলেন, ‘প্রকৌশল বিভাগ থেকে চূড়ান্ত তালিকা এলে সেমতে আমরা ভাঙার উদ্যোগ গ্রহণ করি।’ এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘সিডিএ থেকে প্রকৌশল বিভাগে তালিকা আসে। পরে চসিক সেটি তদন্ত সাপেক্ষে ভাঙে।’ আর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ ভবনই ভবন কোড না মেনে নির্মিত। ফলে এগুলো ভূমিকম্পঝুঁকিতে থাকে। প্রয়োজনীয় তদারকি ছাড়াই অনেক ভবন তৈরি হয়েছে। এমন স্থানেও ভবন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না।’ তাই ভবন নির্মাণে অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহানগরে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ৬ দশমিক ৯৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ১২টি ভবন হেলে পড়েছিল। ১৯৯৭ সালের ২১ নভেম্বর ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ সওদাগর ভিলা নামের পাঁচ তলা ভবনটি ধসে ২৩ জন মারা যায়। ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর নগরের রৌফাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় একটি চার তলা ভবন হেলে পড়ে পাশের একটি পাঁচ তলা ভবনের সঙ্গে গিয়ে ঠেকে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।