করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক নারীর অবস্থানের কারণে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ৭ নম্বর সড়কের ৬৪ নম্বর ভবন ও বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার এলাকার সৈয়দ শাহ রোডের একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতেই এ দুটি বাড়ি লকডাইন করে প্রশাসন।
অন্যদিকে, বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ নাগকির নাগরিক হোম কোয়ারান্টাইন না মানার অভিযোগে একটি বাসায় লাল পতাকা টাঙানো, এক নাগরিকের নাম-পরিচয়সহ রেড স্টিকার লাগানো এবং কোরিয়ান নাগরিকের পরিচালিত রেস্টুরেন্ট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। বুধবার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এসব নির্দেশনা দেন।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার ৭৫ বছর বয়সী এক নারী ওমরাহ করে দেশে ফিরেন গত ১৩ মার্চ। দেশে ফিরেই তিনি চট্টগ্রামের চান্দগাঁও সিডিএ আবাসিক এলাকার ছেলের বাসায় ওঠেন। এরপর ১৪ মার্চ খুটাখালীর নিজ বাড়ি যান। ১৭ মার্চ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কক্সবাজারে নেয়া হয়। ওইদিন তিনি শহরের টেকপাড়ায় বড় ছেলে বাসায় ওঠেন। ১৮ মার্চ জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই রোগীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার অসুস্থতা দেখে নমুনা পরীক্ষার জন্য ২২ মার্চ রাজধানীর আইইডিসিআর এ পাঠায়। গত মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) ওই নারীর করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। করোনা আক্রান্ত ওই নারীর সাত সন্তান।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে ওই বৃদ্ধ নারী সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের সব বাড়ি ইতিমধ্যে লক ডাউন করা হয়েছে। তাছাড়া নির্দেশনা অনুযায়ী কক্সবাজারের দুটি বাড়িও লকডাউন করা হয়।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এক জাপানি নাগরিক গত ১১ মার্চ বাংলাদেশে এসে হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে তার কর্মস্থল চট্টগ্রাম ইপিজেডের সেকশন-৭-এ নিয়মিত অফিস করছেন। তিনি ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রায় ৩০ জনের বেশি নাগরিক করোনোভাইরাস প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মানছেন না।
এ নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তাছাড়া খুলশীর ২ নং রোডের ১২/২ নম্বর বাসায়ও সরেজমিন পরিদর্শন করে কোয়ারেন্টাইন না মেনে ‘কোরিয়ানা রেস্টুরেন্ট’ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইমিগ্রেশনের তথ্য অনুসারে জাপান নাগরিক আকিরো সাইতোর বাংলাদেশে অবস্থানের ঠিকানা উত্তর খুলশী এলাকার ২ নং রোডের ৬১/সি নম্বর বাসা। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারি, তিনি জাপান থেকে এসেই নিয়মিতভাবে চট্টগ্রাম ইপিজেডে কর্মস্থলে (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, সেকশন-৭) যাতায়াত করছেন। ওই বাড়িতে আরো জাপানি নাগরিক বসবাস করছেন। বাসাটিতে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়েছি। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই নাগরিকের নাম-পরিচয়সহ রেড স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। খুলশী থানাকে জাপানি নাগরিকের বিষয়ে নজরদারি করতে বলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে খুলশীর ২ নং রোডের ১২/২ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ‘কোরিয়ানা রেস্টুরেন্ট’ নামের দক্ষিণ কোরিয়ান রেস্টুরেন্ট পরিচালিত হচ্ছে। ওই দেশের নাগরিক সি জং কিম— গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশে আসেন। তার ঠিকানা দেওয়া আছে এই রেস্টুরেন্টের। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তিনিও এ ঠিকানায় হোম কোয়ারেন্টাইনে নেই। কেয়ারটেকারের কাছ থেকে জানতে পারি, সি জং কিম মাঝে মধ্যে এ রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করতে আসেন। স্থানীয় লোকজন ও প্রতিবেশীদের তথ্য মতে, এ রেস্টুরেন্টে প্রচুর জাপানি-কোরিয়ান-চাইনিজদের আনাগোনা। এ রেস্টুরেন্টের কোরিয়ান ম্যানেজার ও মালিককে রেস্টুরেন্ট তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।’
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার