ফাইজার এবং জার্মান বায়োটেকনোলজি সংস্থা বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন গবেষকরা। এই ভ্যাকসিন তৈরির পেছনে কাজ করেছেন এক তুর্কি-জার্মান দম্পতি।
২০০৮ সালে জার্মানির মেইনজে বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উগুর শাহিন ও তার স্ত্রী প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ওজলেম তুরেসি। ইতোপূর্বে তারা দীর্ঘদিন ক্যান্সার চিকিৎসার ইম্যিউনোথেরাপি নিয়েও গবেষণা করেছেন।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ শুরু হওয়ার পরই তারা ভ্যাকসিন তৈরির পরিকল্পনা করেন, মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজারের অর্থায়নেই তারা তৈরি করেন এখন পর্যন্ত সর্বাধিক কার্যকর এই ভ্যাকসিনটি।
শাহিন ও তুরেসি দুজনই চিকিৎসক। ক্যান্সার গবেষণার লক্ষ্যে ২০০১ সালে দুজনে একত্রে গড়ে তুলেন গানিমেড ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেন তারা।
তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের সফলতার খবরে বায়োএনটেকের শেয়ার দর বেড়ে ২৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এর মাধ্যমেই তারা দুজন জার্মানির শীর্ষ ১০০ ধনীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন।
গত মে মাসে তারা সিএনএনকে জানান, সমাজের জন্য কিছু করার দায়বদ্ধতা থেকেই তারা ভ্যাকসিন গবেষণার কাজ শুরু করেছেন।
শাহিন তুরস্কের ইস্কান্দারুনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই বাবার সাথে জার্মানিতে পাড়ি জমান, তার বাবা জার্মানিতে এসে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তুরেসির জন্ম জার্মানিতে হলেও তার বাবা ছিলেন তুরস্কের নাগরিক। জার্মানির হামবুর্গের এক হাসপাতালে কাজ করার সময়েই তাদের পরিচয়। গবেষণায় আগ্রহের জায়গা থেকে দুজনে একত্রে ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণা শুরু করেন। এমনকি তারা তাদের বিয়ের দিনটিও শুরু করেছিলেন ল্যাবে কাজ করার মাধ্যমে।
জানুয়ারিতে চীনের ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে একটি গবেষণাপত্র পড়ার পরই এমআরএনএ ভিত্তিক ভ্যাকসিন গবেষণার পরিকল্পনা করেন। ভ্যাকসিন গবেষণা প্রকল্পে নিয়োগ দেন ৫০০জন কর্মী। মার্চেই বিনিয়োগকারী হিসেবে ফাইজারের সাথে যাত্রা শুরু হয় বায়োএনটেকের।
ফাইজার এবং বায়োএনটেকের এই ভ্যাকসিনটি একটি এমআরএনএ ভ্যাকসিন। উচ্চ সংক্রমণ হারের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ভ্যাকসিটির তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের ফলাফলে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
বায়োএনটেক/ফাইজারের ভ্যাকসিন ছাড়াও চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল চালানো আরও কয়েকটি ভ্যাকসিনই সফল হবে বলে জানিয়েছেন শাহিন। তিনি আরও জানান, অনুমোদন পাওয়ার পর তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হবে ২০২১ সালে এক দশমিক ৩ বিলিয়নের বেশি ডোজ উৎপাদন করা। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ভ্যাকসিনটির জরুরি ব্যবহারের আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র: সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ