চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার তৈলারদ্বীপ গ্রামের একজন রোগী করোনা উপসর্গ নিয়ে ভুগছিলেন কয়েকদিন ধরে। গত শনিবার রাতে মুমূর্ষু অবস্থা হলে চিকিৎসক আইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেন। কিন্তু রাতে সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালে মিলেনি আইসিইউ শয্যা। গত শনিবার দিনগত রাতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মিলে আইসিইউ শয্যা। কিন্তু গত রবিবার ভোরেই তিনি মারা যান।
চট্টগ্রামে জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা সংকট। বাড়ছে রোগীদের হাহাকার, দুর্ভোগ ও চরম ভোগান্তি। ফের দেখা দিয়েছে এক বছর আগে রোগী নিয়ে ছোটাছুটির সেই করুণ চিত্র।
জানা যায়, চট্টগ্রামে গত ২১ মার্চ আক্রান্ত শনাক্ত হয় ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ২০ মার্চ শনাক্ত হয় ১১ শতাংশ, ১৯ মার্চ শনাক্ত হয় ৯ শতাংশ, ১৭ মার্চ শনাক্ত হয় ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও ১৬ মার্চ শনাক্ত হয় ৭ শতাংশ। চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা চলছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২৫০টি সাধারণ ও ১০টি আইসিইউ শয্যায়, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১৫০টি সাধারণ ও ১০টি আইসিইউ শয্যায় এবং জেনারেল হাসপাতাল ইউনিট-২ এর ৬০ শয্যায়। গত পাঁচদিন ধরে জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ’র ১০টি শয্যাতেই রোগী ভর্তি থাকছেন। তাছাড়া বেসরকারি হাসপাতালের প্রায় ৭০টি আইসিইউ এখন রোগী ভর্তিতে পূর্ণ।
চমেক হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অজয় দেব বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে। শয্যা সংকট দেখা দেবে। আগে যেখানে দৈনিক সংক্রমণ ৪০০ তে নেমে এসেছিল, এখন তা বেড়ে ২৮০০ হয়েছে। ফলে সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই এবং এখন থেকেই। না হয় গতবারের চেয়ে অনেক বেশি চরম মূল্য দিতে হবে। তাই অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক অনুষ্ঠান ও বেড়ানো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।’
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. রাজদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে এ হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী ১০ জনই ভর্তি থাকছে। এখন যা আক্রান্তের ফল দেখা যাচ্ছে তা কমপক্ষে গত দুই সপ্তাহ আগে পর্যন্ত যা হয়েছে তার প্রতিফলন। আর এখন যা চলছে তার ফলাফল আসবে আরও দুই সপ্তাহ পর। প্রতিদিনই এভাবে দুই সপ্তাহ আগের ফলাফল যোগ হবে। অতএব সবার বুঝা উচিত, কোথায় যাচ্ছি, কোন অবস্থার দিকে যাচ্ছি।’
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে গত কয়েকদিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই এখন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক-সচেতন করতে আমরা নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেছি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার একদিনেই নতুন করে ২৭২ জন আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মহানগরে ২৩৪ জন এবং ১৫ উপজেলায় ৩৮ জন। সোমবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত হয় ৩৮ হাজার ২৩ জন। এর মধ্যে মহানগরে ৩০ হাজার ১১৫ জন ও উপজেলায় ৭ হাজার ৯০৮ জন। ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৩৮৩ জন। এর মধ্যে মহানগরে ২৮১ জন ও উপজেলায় ১০২ জন।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর