২৫ এপ্রিল, ২০২১ ০৯:৩০

নভেম্বরের গা ছাড়া ভাবে ভয়াবহ খেসারত দিচ্ছে ভারত

অনলাইন ডেস্ক

নভেম্বরের গা ছাড়া ভাবে ভয়াবহ খেসারত দিচ্ছে ভারত

চিতা জ্বলছে সারি সারি। তার মাঝখান দিয়েই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মরদেহ। ছবি: পিটিআই

ভারতে গত নভেম্বর থেকে যখন সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছিল, তখন জনগণ যেমন কোভিড সতর্কবিধি মেনে চলা ছেড়ে দেয়, তেমনই গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও। ব্রিটেনের অভিজ্ঞতা দেখে গত নভেম্বরেই বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ভারতে করোনা সংক্রমণের আরও মারাত্মক দ্বিতীয় ধাক্কা আসতে চলেছে। 

বিরোধীদের অভিযোগ, ওই সতর্কবার্তা সত্ত্বেও পরিকাঠামোগত উন্নতির দিকে কেন্দ্রের মনোযোগ না-দেওয়ার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে দেশবাসীকে। দেশের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে স্থানাভাব, অক্সিজেনের অভাব, জীবনদায়ী ওষুধের ঘাটতি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণের পদত্যাগ দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম।

করোনার বিরুদ্ধে লড়াই কার্যত শূন্য থেকে শুরু করলেও নরেন্দ্র মোদি সরকারের হাতে এক বছরের বেশি সময় ছিল। কিন্তু ‘হার্ড ইমিউনিটি’ বা গোষ্ঠী সংক্রমণের ওপর সরকারের ভরসা এবং অতিরিক্ত প্রতিষেধক-নির্ভরতার কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে গেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। 

তারা বলছেন, ‘গত নভেম্বর থেকে যখন সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছিল, তখন জনতা যেমন কোভিড সতর্কবিধি মেনে চলা ছেড়ে দেয়, তেমনই গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও। অথচ গত বছর আইসিএমআর-এর সেরো সমীক্ষায় দেখা যায়, ভারতের জনসংখ্যার প্রতি পাঁচজনে এক জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ বাকি চারজনের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তখনই ছিল। আইসিএমআরের এক বিজ্ঞানীর মতে, ওই গবেষণা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, দেশের ১৩৪ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটির দ্বিতীয় ধাক্কায় করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সরকারের উচিত ছিল, সেই কথা ভেবে চিকিৎসা পরিকাঠামোকে প্রস্তুত করে তোলা।

এর পাশাপাশি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও গত নভেম্বরে নিজেদের রিপোর্টে কেন্দ্রকে একাধিক সুপারিশ করেছিল। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনযুক্ত শয্যা, আইসিইউ শয্যা, ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। সেজন্য স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি-র প্রায় ২.৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছিল। বড় হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলোতে নিজস্ব অক্সিজেন প্লান্ট গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার অভিযোগ, এসব কিছুই মানেনি কেন্দ্র। ফলে অক্সিজেনের অভাবে মানুষকে মরতে হচ্ছে। 

শনিবার কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বলেন, ‘সরকার কি এত দিন পরে জেগে উঠল? মানুষ আত্মীয়দের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হাতে-পায়ে ধরছেন, অনেকে পিঠে করে অক্সিজেনের সিলিন্ডার বয়ে আনছেন। এই অপদার্থতার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের কি পদত্যাগ করা উচিত নয়?’ 

গত বছর ভারতে করোনার সংক্রমণ কমে আসার পরে বিশেষজ্ঞদের বৈঠকও কমে যায়। এই বছরের গোড়ায় বিজ্ঞানীদের করোনা সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের একটিমাত্র বৈঠক হয়েছে। এর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সরকারের কোভিড সংক্রান্ত পরামর্শদাতা গোষ্ঠীর অনেকেই ‘হার্ড ইমিউনিটি’ নীতির পক্ষে ছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, এ ধরনের সংক্রমণ জনগোষ্ঠীতে ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত তা সাধারণ রোগে পরিণত হবে না। তাই প্রবীণদের প্রতিষেধকের আওতায় আনা হোক, যাতে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু কমে যায়। অন্য দিকে অপেক্ষাকৃত তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজের গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠুক, এমন ভাবা হয়েছিল। এই নীতি কিন্তু সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল ব্রিটেন ও সুইডেনে। তা সত্ত্বেও একই নীতিতে ভরসা রেখেছিল সরকার।

সূত্র: আনন্দবাজার

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

সর্বশেষ খবর