প্রকোপ বাড়ায় করোনা রোগী উপচে পড়ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। গত ২৪ ঘণ্টায়ও করোনা এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায়ও ৮ জনের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ রামেক হাসপাতালে এখন প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ জনের মৃত্যু হচ্ছে। এই নিয়ে গেল এক সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা ৮০ জনে দাঁড়াল। এর মধ্যে ৬৫ জনই করোনার 'হটস্পট' হয়ে ওঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার অধিবাসী। ৬৫ জনের মধ্যে ৩৯ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিবাসী এবং বাকি ২৬ জন রাজশাহীর।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, গেল ২৪ ঘণ্টায় মৃত আটজনের মধ্যে চারজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। অন্য চারজন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। করোনা পজেটিভ হয়ে মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজনের বাড়িই রাজশাহীতে। আর একজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে রাজশাহীর আরও দু'জন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু'জন মারা গেছেন।
বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ২২৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ এবং সাধারণ বেডের জন্য করোনা রোগীদের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেছে। স্থান দিতে না পারায় অনেক ক্ষেত্রেই ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। অক্সিজেন স্যাচুরেশন মোটামুটি থাকলেই তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৫ এর নিচে নেমে যাচ্ছে কেবল তাদেরকেই ভর্তি করা হচ্ছে। তবে তাদেরও বেড দেওয়া যাচ্ছে না। ভর্তি নেওয়া হলেও তাদের অনেককে হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর বেড বাড়াতে গিয়ে একটির পর একটি সাধারণ ওয়ার্ড করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হচ্ছে। এতে সাধারণ ওয়ার্ডের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমন ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে সাধারণ ওয়ার্ডের চিকিৎসা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আজ রামেক হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ডটিকেও করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল থেকে এই ওয়ার্ডটিও করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এখানে ৩২টি বেড রয়েছে। ফলে এই বেডগুলো সংযুক্ত হওয়ার রামেক হাসপাতালে এখন করোনা ইউনিটে বেডের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৬৪টি। আগে ছিল ২৩২টি বেড। এছাড়া হাসপাতালের ১৮টি আইসিইউ বেড ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা রোগীদের জরুরি চিকিৎসায়। তবে একটিও ফাঁকা নেই! অথচ প্রতিদিন গড়ে ৪০ জনেরও বেশি রোগী আইসিইউ শয্যার অপেক্ষা থাকছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী বলেন, দিনদিন করোনা ইউনিটে রোগী বেড়ে যাওয়ায় রামেক হাসপাতালে দেখা দিয়েছে বেড ও চিকিৎসক সংকট। করোনা রোগীদের সামাল দিতে গিয়ে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। তাই আজ বেড সংখ্যা ২৩২ থেকে আরও বাড়িয়ে ২৬৪টি করা হয়েছে। আাগামীকাল থেকে এই বেডগুলো করোনা ইউনিটে যুক্ত হবে। এছাড়া হাসপাতালটির আইসিইউ ইউনিটে মোট ১৮টি ভেন্টিলেটর আছে। তবে সেখানে আরও বেশি ভেন্টিলেটর প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক।
হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের কাছে আরও ভেন্টিলেটর চেয়েছি।’
বিডি-প্রতিদিন/আরাফাত