সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে দিনাজপুর জেলায়। তুলনামূলক খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায়, কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এছাড়া সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় এবং বাড়তি অর্থ দিয়ে বোরো আবাদ ভালোভাবে করার সুবিধা হওয়ায় দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় দিন দিন বেড়েছে সরিষার চাষ। বোরো ও আমন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে জমি ফেলে না রেখে ওই জমিতে সরিষা চাষ করেন চাষিরা। এছাড়াও সরিষা চাষের কারণে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। আবার পরে বোরো চাষের জমিতে সারও তেমন দিতে হয় না। জেলার হাকিমপুর এলাকায় এক সময় বোরো ও আমন ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল চাষ করতেন না চাষিরা। কিন্তু বর্তমানে দুই ফসলি জমিকে তিন বা চার ফসলি করে গড়ে তুলতে রবি শষ্য আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন চাষিরা। এবার হাকিমপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার ৮২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এরকম বিভিন্ন উপজেলার অনেক জমিতে এ কারণেই সরিষা চাষ হওয়ায় দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। এরপরেও তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় বাড়তি কোনো তদারকির প্রয়োজন না থাকায় বাড়ছে সরিষা চাষ। এরই মধ্যে চলতি রবি মৌসুমে দিনাজপুরে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। কয়েকজন কৃষকরা বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও সরিষাতে পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি ৫-৬ মণ করে সরিষা হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ হলুদ বর্ণের সরিষা ২২০০-২৫০০ টাকা, কালো বর্ণের সরিষা ১৮০০-২০০০ টাকা। তাতে করে সরিষা চাষাবাদে সবকিছু বাদ দিয়ে বিঘাতে ন্যূনতম ৩-৪ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। হাকিমপুরের ইসমাইলপুরের কৃষক আলম হোসেন বলেন, সাধারণত আমন ধান কাটার পর বোরো ধান লাগানোর পূর্ব পর্যন্ত মাঝামাঝি প্রায় ৩ মাস জমি পতিত থাকে। তাই সে সময় জমিগুলো ফেলে না রেখে বাড়তি লাভের জন্য সরিষা চাষ শুরু করি। সরিষা লাগানোর পর কাটা-মাড়াই শেষে খরচ বাদ দিয়ে কমপক্ষে ৩-৪ হাজার টাকা লাভ হয়। তাই গতবারের মতো এবারও তিন বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে লাভবান হয়েছি। আর এই বাড়তি টাকা দিয়ে সেই জমিতে বোরো ধান রোপণ করছি। সরিষা চাষাবাদের কারণে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। যার কারণে বোরো আবাদে জমিতে সারও তেমন দিতে হয় না। এতে করে বোরো ধানেও আমাদের লাভ হয়। হাকিমপুরের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের চাষি মাহবুবুর রহমান বলেন, অন্য কৃষকদের মুখে লাভের কথা শুনে আমি এবারই প্রথম সরিষা লাগিয়েছিলাম।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো রয়েছে, তাতে বেশ লাভ হবেই বলে মনে হচ্ছে। উল্লেখ্য, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দিনাজপুর জানায়, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ১৩ হাজার ১৬২ হেক্টর জমিতে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ২৮০টন। এবার বারি-১৪, বারি-১৭. বারি-১৮ জাতের সরিষার চাষাবাদ করা হয়েছে।