ভাঙনের কবলে কুড়িগ্রাম। এ জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের কারণে শুধু বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। বিনষ্ট হয়েছে গাছপালাসহ নানা স্থাপনা। হুমকিতে রয়েছে আবাদি জমিসহ ঐতিহ্যবাহী মোল্লারহাট বাজার। গত দুই মাসে ভয়াবহ নদীভাঙন নদ-তীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষকে আতংকে ফেলেছে। এসব ভাঙনকবলিত অসহায় মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁইও এ মুহূর্তে নেই। বিভিন্ন অফিস-আদালতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েও কোনো ফল আসছে না বলে এলাকাবাসীদের অভিযোগ। আর ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে ঐতিহ্যবাহী মোল্লারহাটটি। উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে বলেন, দ্রুত নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। জানা যায়, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ভাঙনকবলিত স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদ মোল্লারহাটের পূর্ব দিকের অংশে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাব্যাপী ভাঙন চলছে। বর্তমানে এর পার্শ্ববর্তী মোল্লারহাটটি ভাঙনের মুখে। ওই এলাকার উত্তর বালাডোবা গ্রামের ইব্রাহিমের স্ত্রী ছালেহা বেগম জানান, স্বামী খড়ি বেচে খায়। তিন ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি। বাড়িভিটা ভেঙেছে। কোথাও যাওয়ায় জায়গা না পেয়ে নদীর তীরে ছাপড়া তুলে ৬ মাস ধরে বসবাস করছি।। এমন অবস্থা তার মতো অনেকের। কিন্তু ভাঙনের কারণে এখনো থাকার জায়গা অনেকের ভাগ্য জোটেনি। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় কাটছে তাদের দিন। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার বাদশা জানান, গত পাঁচ বছরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ৬ নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের মানুষ এখন ৪ ও ৭ নং ওয়ার্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানেও চলছে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের তান্ডব। ভাঙনের মুখে পড়েছে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ আবাদি জমি। গৃহহীন পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউ কেউ জায়গা না পেয়ে নদীর তীরে আপাতত ছায়লা করে বাস করছে। ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জামাল মন্ডল জানান, এই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী মোল্লারহাট রয়েছে ভাঙনের মুখে। চরাঞ্চলের মানুষের কেনাবেচার জন্য প্রয়োজনীয় এই হাটটি রক্ষায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি চালাচালি করেও প্রতিকার মিলছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পাঁচ শতাধিক জিও ব্যাগ ফেললেও তা কোনোভাবেই কাজে আসছে না। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, শুকনো মৌসুমে মোল্লারহাটে নদীভাঙন কিছুটা কম হলেও এরই মধ্যে আমরা ভাঙন রোধে কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।