সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে খরিয়া নদী

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

অস্তিত্ব সংকটে খরিয়া নদী

অস্তিত্ব সংকটে ময়মনসিংহের ফুলপুরের ঐতিহ্যবাহী খরিয়া নদী। একসময়ের খরস্রোতা এই নদী যেন হারিয়ে যাচ্ছে। নাব্য সংকটে এ নদী ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও বড় বড় ডোবায় পরিণত হয়েছে খরিয়া। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বের হয়ে আসা এই নদীটি ফুলপুরের ঐতিহ্যের একটি অংশ। উপজেলা সদরের আমুয়াকান্দা, ছনকান্দা ও রূপসী বাজার হয়ে নেত্রকোনার মগড়া নদীতে মিশেছে খরিয়া। খরিয়া নদী এখন সরু নালায় পরিণত হয়েছে। ফুলপুরের মানচিত্র নতুন করে তৈরি করা হলে ওই মানচিত্রে এক-দেড়শ গজ প্রশস্ত খরিয়া নদী খুঁজে না পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিভিন্ন জায়গায় সেতু দেখে কিছুটা আন্দাজ করা যেতে পারে যে, সেখানে বড় নদী ছিল। এছাড়া খরিয়া নদী চেনার তেমন কোনো আলামত এখন আর নেই। খরিয়া মানে ফসলের বিশাল ফসলের মাঠ। খরিয়া মানে বড় বড় বোরো খেত। শুকনা মৌসুমে খেলার মাঠ। খরিয়া মানে মাছ চাষের বড় ঘের ও পুকুর। একসময় খরিয়ার বুক বেয়ে বহু দূর-দূরান্ত থেকে ফুলপুরে লঞ্চ-স্টিমার ও পালতোলা নৌকা আসা-যাওয়া করত। ধান-পাট বোঝাই বড় বড় মালবাহী নৌকা আসত। খরিয়া নদীকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ ও রাজধানী ঢাকাসহ জারিয়া, ঝাঞ্জাইল, পূর্বধলা ও নেত্রকোনার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফুলপুরের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিল। কাঁঠাল, নারকেল ও বিভিন্ন ধরনের মালামাল ভর্তি নৌকা আসত।

উল্লেখযোগ্য আমদানি-রপ্তানি তখন নদীপথে হতো। এখন ওইসব যেন রূপকথার গল্প। উপজেলার কৃষ্টপুর গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার বলেন, ‘তিনঘন্ডি উড়ায়া এই নদী দিয়া লঞ্চ চলত। ঢাহাত্তে নাও আইত মাল লইয়া। অহন এডি কই দেকবাইন? নদী নাই। নদী অহন খেত অইয়া গেছে। এই নদীতে প্রতি বছর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা হতো। দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতা উপভোগ করত হাজার হাজার মানুষ।’ ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দেরও আগে খরিয়া নদীর তীরে জমিদারদের কাচারিসহ নানা স্থাপনা গড়ে ওঠেছিল। ব্রিটিশ আমলে উজান জোয়ার নামে প্রশাসনিক অঞ্চলের ভবন নির্মিত হয়েছিল ফুলপুরের ছনকান্দা বাজার সংলগ্ন খরিয়া নদীর পাড়ে। সুসং দুর্গাপুর থেকে ব্রিটিশরা তখন পালতোলা নৌকাযোগে ফুলপুরে আসত। বিকাল হলে ছেলে বুড়ো সবাই খরিয়া নদীর পাড়ে গিয়ে জমজমাট আড্ডায় বসত। উপভোগ করত নদীতে হঠাৎ জলজ প্রাণী শিশু ভেসে ওঠা ও বিচিত্র ধরনের সারি সারি পালতোলা নৌকা যাতায়াতের অপরূপ দৃশ্য। ওইব এখন শুধুই কল্পনা। কালের বিবর্তনে মরিয়া খেত হয়ে গেছে খরস্রোতা নদী খরিয়া। খরিয়া নদী এখন ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে। দুই তীরে যাদের জমি খরিয়া অনেকটা তাদের হাতেই জিম্মি। এমনকি আগে যারা নদীর পাড়ের অংশ বিক্রি করে চলে গিয়েছিল পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় তাদের এখন দিন লাগছে। নতুন করে তাদের কেউ কেউ আবার এসে নদী দখলে নিচ্ছে। উপজেলার নগরবেড়া গ্রামের সম্রাট  বলেন, নদীর পাড়ে যাদের জমি নেই তারাও ধান লাগানোর ছলনায় নদী দখল করছে। ৫০০ বর্গমিটারের খরিয়া নদী এখন টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। দেখলে কান্না আসে- বললেন ফুলপুর সরকারি কলেজ রোডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, নদী থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। বর্ষাকালে যদি কেউ পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর