বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

মৌলভীবাজারে উপবৃত্তির টাকা পেতে হয়রানি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারে উপবৃত্তির টাকা পেতে হয়রানি

বেকার যুবক-যুবতীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতেই বর্তমান সরকার সারা দেশে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। প্রতিবছরই ওইসব কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। যাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাই নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। এছাড়া প্রবাসে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে বেশি টাকা উপার্জন করতে পারে। সে লক্ষ্যেই ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। তিন বছরের মাথায়ই ওই কেন্দ্রটি অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান থেকে শুরু করে প্রশিক্ষক ও কর্মচারীরা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী দালাল চক্র। জানা যায়, ওই কেন্দ্রে স্বল্পমেয়াদি (নিয়মিত) ছয়টি ট্রেডে ছয় মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মাসিক ১ হাজার টাকা হারে উপবৃত্তি প্রদান করার কথা থাকলেও দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ শেষে টাকা দেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে একাধিক দিন আকুতি করার পরেও নানা অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের টাকা না দিয়ে বিদায় করে দেন সংশ্লিষ্ট ট্রেডের প্রশিক্ষকরা।

ওই কেন্দ্রের গার্মেন্টস ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থী নাহিদুল ইসলাম বলেন, ক্লাস করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও আমাকে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হয়নি। অনেক চেষ্টা-তদবির করে আমার সঙ্গের একজন ৭২০ টাকা এবং আরেকজন ১ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছে। বাকি টাকা তারা আত্মসাৎ করেছেন। ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের জয়দাস ও সাইফুল্লাহ হাসান, সিভিল কনট্রাকশন ট্রেডের তালহাসহ অনেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে উপবৃত্তির টাকা তাদের দেওয়া হয়নি। জাপনিজ ভাষার প্রশিক্ষণার্থী মইনউদ্দিন আহমেদ বলেন, বই কেনার কথা বলে প্রশিক্ষক জাহেদ চৌধুরী প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তির সময়ই ১ হাজার টাকা নেন। এভাবে তিনি অনেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ড্রাইভিংয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন বাবুল নামের এক প্রশিক্ষক। বাবুল এখানে চাকরি করার সুবাদে তার ছেলে হৃদয় গড়ে তুলেছে দালাল চক্র। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশযাত্রী পুরুষদের কাছ থেকে ২ হাজার ও মহিলাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে হৃদয় সনদ বিক্রি করছে। ড্রাইভিংয়ের অফিসে বসেই সে ওইসব কাজ করে। সরকারি কার্যালয়কে অনেকটা তার ব্যক্তিগত অফিসে পরিণত করেছে। দালাল হৃদয় প্রশিক্ষকের ছেলে থাকায় কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারে না। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ড্রাইভিংয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, সময় মতো ক্লাস শুরু হয়নি কিন্তু সময়ের আগে ছুটি হয়ে যায়। অধিকাংশ সময় গাড়ি নষ্ট থাকে। মেরামত করার কথা বললে, কর্তৃপক্ষ বলে বাজেট নেই।  এ বিষয়ে মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ নাহিদ নিয়াজ জানান, আমার এখানে বাইরের লোক ঢোকা নিষেধ। তারপরেও কেউ ঢুকে থাকলে আমার জানা নেই। করোনার আগে কম্পিউটার ট্রেড ব্যতীত সব ট্রেডের শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর