শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

বেড়িবাঁধে মানবেতর জীবন

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

বেড়িবাঁধে মানবেতর জীবন

‘মোগো কপাল খারাপ, জন্মের পর থেকে পানি লইয়া থাহি। বেড়িবাঁধ ভাঙে। ফলে শত শত মানুষ বেড়িবাঁধে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। কয়েক দিনের বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুইব্বা গেছে, মোরা ডুইব্বা মরি।’ বরগুনার পাথরঘাটা বলেশ্বর নদ সংলগ্ন ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে এমনভাবে নিজেদের আক্ষেপ কথা জানান এলাকাবাসী।

আক্ষেপ করে একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘মোগো ওয়াপদা (বেড়িবাঁধ) বাইন্দা না দেলে পরানডা বাঁচান যাইবে না। সরকাররে কত কইলাম কেউ হোনে না। ‘বেড়িবাঁধের ওপরের বাসিন্দা মনি বেগম বলেন, ‘স্বামীর পোতা (বাড়ির জমি) অনেক আগেই নদীতে লইয়া গেছে। বহু বছর ধইরা ওয়াপদার ওপরে থাহি। জীবনটা আজরাইলের ধারে আগেই দিয়া রাহি। ওয়াপদা শক্ত হয় না মোগো ভাগ্যও বদলায় না।’ বাঁধসংলগ্ন বাসিন্দা জাহাঙ্গীর, জাকির ও মনির বলেন, ২০০৭ সালে পদ্মা, রুহিতা বেড়িবাঁধ ভেঙে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সেই থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে আছে এ এলাকার সাড়ে ৭ হাজার বাসিন্দা। জানা যায়, প্রায় প্রতি বছরই উপকূলীয় জেলা বরগুনায় কোনো না কোনো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। নড়বড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ফসলি জমি। স্রোতে ভেসে যায় শত শত মাছের ঘের। মুহুর্তে সব হারিয়ে নিঃস্ব হন হাজার হাজার মানুষ। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে প্রকৃতির এমন নিষ্ঠুরতা। এরপরও জেলায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বরগুনার মানুষ। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম জানান, বরগুনার ৬৫ স্থানে প্রায় ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে আছে পাথরঘাটার কয়েকটি এলাকা। ‘ছয় মাস আগে বেড়িবাঁধ, স্লুইসগেটসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মন্ত্রণালয়ে তিনটি প্রকল্প জমা দিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই প্রকল্পের অনুমোদন দেবেন এবং টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর