রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাঙনে দিশাহারা নদী পাড়ের মানুষ

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

ভাঙনে দিশাহারা নদী পাড়ের মানুষ

তিস্তা ও ধরলার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত এক সপ্তাহে প্রবল ভাঙনে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা এবং আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। তিস্তার ভাঙনে গত ২ দিনে জেলার আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড় বাঁধের অর্ধ কিলোমিটার বিলীন হয়েছে। এই বাঁধটি স্থানীয়রা নিজ অর্থে প্রায় ১৫ লাখ ব্যয়ে নির্মাণ করেন। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই তীব্র ভাঙনে দিশাহারা লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা পাড়ের মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাটের ফলিমারী এলাকায় ধরলা নদীর ডান তীরে গত তিন দিনে নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীগর্ভে চলে গেছে বসতভিটা ও ভুট্টাসহ অর্ধশত বিঘা আবাদি জমি। গৃহহারা হয়েছেন অনেক পরিবার। অসহায় পরিবারগুলো স্থানীয় বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, গত তিন দিনে তিস্তার প্রবল ভাঙনে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ঝুঁকিতে থাকা অর্ধশত বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এলাকা বাসির দাবি, আমরা চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিধবা ও বয়স্ক ভাতা চাই না আমার তিস্তার বাঁধ চাই। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামে তিস্তা নদীতীরে বসে কূল ভাঙার দৃশ্য অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলেন কৃষক দুলাল মিয়া। তাঁর চোখে মুখে পৈতৃক একখন্ড জমি হারানোর শঙ্কা। নদীর পানিও বাড়ছে ভাঙনও বাড়ছে। উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বয়সী কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, গত দুই দিনে ভিটেমাটি গিলেছে তিস্তা। সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে আজ নিঃস্ব তিনি। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফলিমারী গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল হক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত কয়েক দিন আগে চোখের সামনেই বসতভিটা ধরলা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন আশ্রয় নিয়ে আছেন অন্য জায়গায়। সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর বর্ষা আসার আগেই  ধরলার ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্ষাকালে ভাঙন আরও তীব্র হতে পারে। ঝুঁকিতে থাকা অনেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। হঠাৎ তিস্তায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু পানিতে ডুবে গেছে।  তিস্তাপাড়ের হাসান আলী বলেন, ‘নদীর পাড়ে আমার বাড়ি ছিল। বাড়ি ভাঙতে ভাঙতে আজ যেখানে বাড়ি দেখতেছেন তার পাশ পর্যন্ত ভাঙন আসছে। আমার বাড়িটা যেকোনো সময় ভাঙতে পারে। কাচারত আসছে ভাঙন। সরকার শুধু হামাক বুঝ দেয়। তিস্তাপাড়ের আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা রিলিপ-টিলিপ কিছু চাই না। বালুর বাঁধ থাকি শুরু করি নদীর পাশে যদি বস্তা দিত তাহল আর নদী ভাঙত না।’

তিস্তাপাড়েন   শোভা বলেন, ‘আমাদের ভুট্টাবাড়ী ৪ দোন মাটি আবাদ কচ্চি। খুব কষ্ট করি। বাড়ি পাকা করছি তায়ও শোগ ভাঙ্গি যাবার নাগছে। তোমরা বোল্ডার ফেলে দেও। তিস্তা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে আদিতমারী উপজেলা ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, বালুর বাঁধটির অর্ধেকের বেশি বিলীন হয়েছে। বাকিটুকু রক্ষা করতে জিও ব্যাগ প্রয়োজন। যার চাহিদা পাঠাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেটের আবেদন করেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত বাজেট পাইনি। ভাঙন এলাকায় কিছু বস্তা ফেলা হয়েছে যাতে করে ভাঙন রোধ করা যায়।’ এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, তিস্তার ভাঙন এলাকা আদিতমারী ইউএনও পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুদ আছে, ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত বিতরণ করা হবে।

 

সর্বশেষ খবর