বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

চাঁদপুরে অক্সিজেন প্লান্ট ও আইসিইউর কাজ চলছে

নেয়ামত হোসেন, চাঁদপুর

চাঁদপুরে অক্সিজেন প্লান্ট ও আইসিইউর কাজ চলছে

চাঁদপুর জেলাধীন ৮টি উপজেলা ছাড়াও  পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর, লক্ষীপুরের মানুষেরা চিকিৎসাসেবা নিতে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চলে আসে। হাসপাতালটিতে রোগীরা সঠিক চিকিৎসাসেবা ও পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি না পাওয়ার অভিযোগ অনেকের। পাশাপাশি জেলার রোগীর চাপ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবা দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতাল গেটের সামনে আসলেই দেখা যায় সারিবদ্ধ প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স। ভিতরে ঢুকলেই ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা নষ্ট নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতালের বিপরীত পাশে ৮/১০টি পরিপাটি প্যাথলজি। যাদের মহিলা দালালচক্র হাসপাতালে ঢুকে অসহায় রোগীদের প্রতারণা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সেখানে নিয়ে যায়। অফিস চলাকালে করিডোরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। চাঁদপুর শহরটি এখন হাসপাতাল ও প্যাথলজি নগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরের অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো প্যাথলজি ও মেডিকেল সেন্টার গড়ে উঠেছে।

এমনকি অনেকগুলো প্যাথলজি কয়েকটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পাশেই রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। বিনা অনুমোদনে চলছে অনেক প্যাথলজি।

একটি চক্র দৃশ্যমান জনাকীর্ণ স্থানে সনদবিহীন টেকনিশিয়ান ও ডিপ্লোমা নার্স ছাড়াই এগুলো  চালাচ্ছে। সিভিল সার্জন, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদফতর বিষয়টি দেখার দায়িত্বের মধ্যে আছে কিনা অনেকের প্রশ্ন? হাসপাতালের অফিস ও স্টোরে একজনের দায়িত্ব অন্যজনকে পালন করতে দেখা গেছে। এখানে চেইন অব কমান্ডে ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। আউট সোর্সিং এর কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে সেভাবে দেখা যায়নি। চিকিৎসা নিতে আসা হাসান বেপারী ও রুমা আক্তার বলেন, ডাক্তার ব্যবস্থাপত্র দিলেও হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ও  সব ওষুধ দিতে পারে না। তাই অনেকে বাহিরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ও ওষুধ কিনতে বাধ্য হয়। অর্থনৈতিক সংকট থাকার কারণেই তো সরকারি হাসপাতালে আসা। শুনেছি সরকারি হাসপাতালে সব পরীক্ষা ও ওষুধ ফ্রি দেওয়া হয়। অথচ হাসপাতালে এসে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে টাকা দিয়ে করাতে হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব মেশিন নাকি নষ্ট। আমরা যাব কোথায়? পানির সমস্যা তো আছেই, আর বাথরুম অপরিষ্কার যা ব্যবহার অনুপযোগী। বিছানার চাদর-কাভারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব দেখা গেছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি। জানা যায়, জুন মাসে আইসিইউ’র জন্য শুধু ৩টি বেড পাঠানো হয়েছে। এর জনবল ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির চাহিদা দিয়ে ডিজি অফিসে চিঠি লিখা হয়েছে। লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের ভিআইই (ভ্যাকুয়াম ইনসুলেটর ইভাপোরেটর) কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। রুমে লাইন ওয়েরিং এর সমস্ত কাজ শেষ। বিস্ফোরক অধিদফতরের অনুমোদনের অপেক্ষা ও  টাইলস, রংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। খুব সহসাই প্লান্টটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ইউনিসেফের অর্থায়ন ও স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল এই প্রকল্পের কাজটি বাস্তবায়ন করছে। স্বাচিপ’র আহ্‌বায়ক, বিএমএ’র সভাপতি ও  চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা.  সৈয়দ নুরুল হুদা বলেন, এক দিকে চিকিৎসক সংকট, অপরদিকে রেডিওলজিস্ট কনসালটেন্ট পদসহ অনেক পদই শূন্য তাই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে সিনিয়র কনসালটেন্ট, জুনিয়ার কনসালটেন্ট ও সহকারী রেজিষ্ট্রার সংকটে রোগীদের সেবা যথাযথ হচ্ছে না। সেই সঙ্গে আল্ট্রাসনোগ্রাম, এনেসথেসিয়া ও এক্সরে মেশিন নষ্ট থাকা ও সেই পদে লোক না থাকায় সেবা ব্যহত হওয়াটা স্বাভাবিক। সাধারণ একটি জি এ মেশিনের জন্য ইএনটি, কার্ডিওলজি ও অন্যান্য জটিল অপারেশন হচ্ছে না। এই অপারেশনের জন্য ১৫-২০ লাখ টাকার মেশিন না দিয়ে, ১ লাখ টাকা দামের মেশিন দিলেই সেবা দেওয়া যেত। চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক মেডিসিন ক্লাস রুম ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়নি। স্বাচিপ সভাপতি আরও বলেন মূলত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষার বিষয়টি সমস্যার মূলে গিয়ে জরুরি সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাঁদপুরবাসীর সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিব উল করিম জানান, আইসিইউ’র ৩টি বেড গত মাসে ঢাকা থেকে এসেছে। আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও লোকবল চেয়ে অধিদফতরে লিখেছি। অক্সিজেন প্লান্টটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমি এসেই বলেছিলাম চিকিৎসাসেবা আরও উন্নত করব। আসার পর  পৌরসভার পানি সাপ্লাই ব্যবস্থা এবং গভীর নলকূপটি ব্যবহার উপযোগী করায় পানির সমস্যা অনেকটা কেটে গেছে। দৈনিক হাজার খানেক রোগীকে  বহিঃবিভাগে সেবা প্রদান করতে হয়। করোনার কারণে এখন রোগীর চাপ কিছুটা কম। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও ৩শতাধিক রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকে। মেডিকেল কলেজটি নিজস্ব ক্যাম্পাসে চলে গেলে ৪র্থ তলায় ওয়ার্ড বর্ধিত করতে পারতাম। চিকিৎসকের অনেকগুলো পদের মধ্যে চক্ষু, গাইনি, প্যাথলজি কনসালটেন্ট, রেডিওলজি কনসালটেন্ট, অর্থ-সার্জারি, এনেসথেটিষ্ট, প্যাথোলজিষ্ট, রেডিওলজিষ্ট পদগুলো শূন্য রয়েছে। ডিজিটাল এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এনেসথেসিয়া মেশিনগুলো নষ্ট। আধুনিক একটি এনেসথেসিয়া মেশিন দেওয়া হয়েছিল। নতুন আঙ্গিকের এই মেশিন পরিচালনার সেই অভিজ্ঞতা কারও নেই। এমনকি হাইসোফ্লোরেড গ্যাস  এর কারণে বিগত এক বছর মেশিনটি নষ্ট হয়ে আছে। ওষুধের সংকট তেমন একটা নেই।

সর্বশেষ খবর