শিরোনাম
সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বগুড়ায় কমছে আলুর দাম

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় কমছে আলুর দাম

বগুড়ায় আলুর দাম কমে যাওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে আলু চাষি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। গত কয়েকদিন ধরে বগুড়ার বাজারে আলুর প্রতি কেজি খুচরায় ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও আলুর কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। আর পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকা কেজি দরে। আলুর মোকাম হিসেবে পরিচিত বগুড়াতেই আলুর দাম এখন নিম্নমুখী। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশের শীর্ষ আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলোর একটি বগুড়া। কয়েক মৌসুম ধরে জেলাটিতে আলু আবাদ ও উৎপাদন ভালো হওয়ার কারণে আলুর দাম সহনীয় পর্যায়ে ছিল। জেলায় গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে জেলায় আলুর ফলন ছিল প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৫ হাজার ৪৫৪ হেক্টর। আর ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৩৮ হাজার মেট্রিক টন। শেষ পর্যন্ত বগুড়ায় গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। জেলায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন পাওয়া যায় বগুড়ায়। গত কয়েক বছর ধরে বগুড়ায় ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় আলুর দাম নিয়ে কৃষকরা খুশি না হতে পারলেও বাজার ব্যবস্থায় আলুর দাম সহনীয় থাকায় ভোক্তারা ছিল নিশ্চিন্ত। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভালো ফলনের কারণে জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়। বগুড়া সদর উপজেলার বারপুর, ঘোড়াধাপ, মরাকাটা, চাঁদমুহা এলাকার কয়েকজন আলু চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর আলুর ভালো ফলন পাওয়া যায়। ভালো ফলন পাওয়া গেলেও বাজারে ভালো দাম ছিল না। গত বছর মৌসুমের সময় বগুড়ার খোলাবাজারে একেবারে ভালোমানের আলু ২৮ থেকে ৩০ টাকা আর স্বাভাবিকভাবে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে। সেই আলু চলতি বছর এসে বর্তমানে কোল্ডস্টোরে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১০ টাকা কেজিতে। এই আলু কোল্ডস্টোরে সংরক্ষণ করার সময় খরচসহ ব্যবসায়ীদের পড়েছে প্রায় ১৭ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেজি প্রতি প্রায় সাড়ে ৬ টাকা করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা নিয়ে গঠিত বৃহত্তর বগুড়া জেলা কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং আরবি হিমাগারের চেয়ারম্যান পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, বগুড়ায় ৫৫টি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। প্রতিটি স্টোরে প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ বস্তা আলু ধারণক্ষমতা রয়েছে। গত বছর বিভিন্ন স্টোরে আলু সংরক্ষণ করে রাখেন। এর সঙ্গে করোনাকালে আলু খালাস ও অন্যান্য জেলায় সরবরাহ হয়েছে কম। আবার সামনে আলুর সিজন আসছে। সব মিলিয়ে সংরক্ষণ করা একযোগে আলু খালাস হওয়ার কারণে বাজারে আলুর দামের দরপতন হয়েছে। এতে করে তাদের কেজি প্রতি আলু বিক্রিতে ৬ থেকে ৭ টাকা লোকসান হচ্ছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. দুলাল হোসেন জানান, বগুড়ায় সবজি হিসেবে আলুর উৎপাদন বরাবরই ভালো। গত বছর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের চিন্তা বাড়ছে।

গত বছরের আলু জেলার বিভিন্ন হিমাগারে এখনো সংরক্ষণ করা আছে। সবজি হিসেবে ছাড়াও বীজ আলুও সংরক্ষণ করা আছে। সামনে আরও একটি আলু চাষের মৌসুম আসছে। হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু খালাস না করলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে। সে কারণে আলু এখন খালাস করার কারণে বাজারে আলু দাম কমেছে। কৃষকদের হাতে অল্প কিছু আলু আছে। মূলত ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি আলু আছে। বগুড়ার মহাস্থান বাজারে আলু কিনতে আসা আবদুস সালাম জানান, মাহস্থান হাটে আলু পাইকারিভাবে ১২ টাকা কেজি আর খুচরা বাজারে ১৪ থেকে ১৫ টাকা আর কিছু ভালো মানের আলু বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ টাকা কেজি। আলুর দাম গত পনেরো দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা কেজি। সেই আলুর দাম হঠাৎ করে কমে এসেছে। বগুড়া শহরের ঘোড়াধাপ বন্দর এলাকার আলু চাষি খোকন হোসেন জানান, এবার আলুর দাম কম। চাষের পর হাটে বিক্রি করা আলুর থেকে খরচ উঠেছে। আমন ধান কাটার পর আবারো আলু চাষ করা হবে। আলু চাষিরা আলুর দাম পেলে চাষে আরও আগ্রহ বাড়বে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর