শিরোনাম
রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বগুড়ায় কাজ শেষ না করেই উধাও ঠিকাদার

সড়কটির সংস্কার না হওয়ায় স্থানীয় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় কাজ শেষ না করেই  উধাও ঠিকাদার

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের সগুনিয়া গ্রামের আধা কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের জন্য খুঁড়ে রেখে কাজ সম্পন্ন না করেই উধাও হয়েছে প্রকল্পের ঠিকাদার। কাজ শেষ না হওয়ায় যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল। এতে করে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে কৃষিনির্ভর এই এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কৃষিপণ্য পরিবহন করতেও গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের সগুনিয়া গ্রামটিতে প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের বাস। গ্রামটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ-মন্দিরসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে গ্রামটিতে। তবে মাত্র আধা কিলোমিটার সড়ক সগুনিয়া গ্রামকে দুর্গম করে রেখেছিল। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের পক্ষ থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি পাকাকরণে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্কুল কানেক্টিং রোড নির্মাণ প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই প্যাকেজে রয়েছে দুটি সড়ক নির্মাণ কাজ। এর মধ্যে একটি হলো উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের সগুনিয়া গ্রামে ৫০০ মিটার সড়ক পাকাকরণ। এটি প্রায় ৩০ লাখ টাকার কাজ। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে চলতি বছরের শুরুতেই বগুড়ার মা তাসিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এই প্যাকেজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। বিগত ছয় মাস আগে সগুনিয়া গ্রামের ওই সড়কটি পাকাকরণ জন্য কাজ শুরু করেন তারা। প্রাথমিক খনন কাজ (বক্স কাটিং) সম্পন্ন করেন। কিন্তু এখানেই শেষ। এরপর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আর কোনো কার্যক্রম নেই। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও তাদের লোকজন কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একাধিকবার লিখিত আদেশ ও নির্দেশনা দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে সূত্রটি জানায়। এদিকে সড়কটি খুঁড়ে রেখে কাজ সম্পন্ন না করেই ঠিকাদার উধাও হয়ে যাওয়ায় এই এলাকার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। ভুক্তভোগী শ্রী দয়াল চন্দ্র, অধির চন্দ্র সরকার, মন্টু প্রামাণিক, প্রফুল্ল চরণ ভৌমিকসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সড়কটি পাকাকরণের জন্য খনন কাজ করেন ঠিকাদারের লোকজন। কিন্তু আর কোনো কাজ করেননি। সড়কের প্রায় আশি ভাগ কাজই পড়ে রয়েছে। তাই বর্ষায় বৃষ্টিপাত শুরু হলে খুঁড়ে রাখা সড়কটির মধ্যে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। কাঁচা সড়কটি কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। এখন পানি না থাকলেও সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। তাই বিগত ছয়-সাত মাস ধরে রিকশা-ভ্যানসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গ্রামবাসী। তারা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক পাকাকরণ কাজটি সম্পন্ন না হলে বিগত মৌসুমের মতোই চলতি মৌসুমের উঠতি ফসল আমন ধান ও শীতকালীন সবজি নিয়ে বিপাকে পড়বেন। কৃষিপণ্য পরিবহন ব্যাহত হলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া গ্রামের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসায় মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. রাসেল আহমেদ বলেন, পারিবারিক সমস্যার কারণে প্যাকেজের কাজগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া বৈশি^ক মহামারী করোনার কারণেও কাজ ব্যাহত হয়েছে। তবে সমস্যার কোনো কারণ নেই কাজটি ইতিমধ্যে অন্য আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছেন তিনি। আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব না হলেও ওই ঠিকাদার দ্রুতই কাজ করবেন বলে জানান তিনি। উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু তালিম হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, কাজটি যাকে দেওয়া হয়েছিল, তারা করেননি। তাই খুঁড়ে রাখা সড়কটি বেশ কিছুদিন ধরে পড়ে রয়েছে। অচিরেই গ্রামের লোকজনের এই দুর্ভোগ কেটে যাবে। সাব-ঠিকাদার হিসেবে একজন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন। তিনিই এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাকাকরণ কাজটি দ্রুতই সম্পন্ন করবেন বলে দাবি করেন এ প্রকৌশলী।

সর্বশেষ খবর