বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিস্তাপারের সব হারানো কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

তিস্তাপারের সব হারানো কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

তিস্তার চরে ফসল রোপণে ব্যস্ত চাষিরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যা ও খরার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তিস্তাপারের কৃষকদের। এখানকার কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি বার বার ধাক্কা খায় বন্যায়। এ বছরও কয়েক দফা বন্যায় কৃষকের আশার গুড়ে বালি পড়েছে। সবশেষ গত অক্টোবরের আকস্মিক বন্যায় তিস্তা-তীরবর্তী পাঁচ উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে তিস্তা। এ নদীর বুকে জেগেছে ধু-ধু বালুচর। ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে চরের বুকে ফসল বুনতে শুরু করেছেন কৃষক। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২৮ হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় এনেছে সরকার। সরেজমিন আদিতমারি উপজেলার চর গোবর্ধন, বালাপাড়া, কুটিরপাড় এবং হাতীবান্ধার গড্ডিমারি, সিন্দুনা, সানিয়াযান চরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, বন্যার ক্ষতচিহ্ন। আশপাশে এখনো পড়ে আছে বিধ্বস্ত বাড়িঘর। তিস্তার বালুতে চাপা পড়েছে ফসলি জমি। কৃষকরা কাঁচি ও কোদাল দিয়ে সেই বালু সরানোর চেষ্টা করছেন। পানি সরে যাওয়ার পর কিছু ফসলে পচন দেখা দিয়েছে। আবার কোথাও শীতকালীন সবজি খেতসহ মিষ্টিকুমড়া, আগাম আলুসহ নতুন ফসল রোপণ করছেন কিষান-কিষানি। কৃষকরা বলছেন, বালুচর এখন তাদের জন্য আশীর্বাদ। এই চরের বালু মাটিতেই ফলবে সোনার ফসল। ঘুরে যাবে করোনা আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ভাগ্যের চাকা। সবজিখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত আসমা বেগম বলেন, ‘চরের মধ্যে আলু, কুমড়া, ভুট্টা লাগাচ্ছি। আলু তোলার পর বাদাম লাগামো।’ নদীতে পানি না থাকায় কষ্ট আছে। গড্ডিমারি ইউনিয়নের চর গড্ডিমারি গ্রামের ওমর আলী বলেন, ‘এবার বানোত হামার মেলা সর্বনাশ হইছে। এরকম ভয়ংকর পরিস্থিতি ইয়ার আগোত কোনো বারে হয় নাই। বালু সারেয়া ধানা কাটা শ্যাষ করি নতুন ফলস নাগামো। প্রতিবছর হামরা কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওছি।’ সদর উপজেলার রাজপুর চরের কৃষক হযরত আলী বাজারে আগাম মরিচ বিক্রি করে লাভের আশা করেছিলেন। আকস্মিক বন্যায় তার সেই আশা শেষ হয়ে গেছে। হতাশ হযরত আলী আবার নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার চরাঞ্চলে ফসলের আবাদ ভালো হয়েছিল। আকস্মিক বন্যায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাধারণত এ সময় বন্যা হয় না। তবে এখন কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, জেলায় রবি মৌসুমে ছয়টি ফসলের যে কোনো একটির জন্য ২৮ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫ উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার কৃষক এই প্রণোদনার আওতায় আসবে। উল্লেখ্য, গত ২০ অক্টোবর উজানের ঢলে তিস্তা অববাহিকায় বিপৎসীমায় এযাবৎকালের রেকর্ড ৬০-৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। পানির স্রোতে তিস্তা-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে দেখা দেয় বন্যা। এতে  ধান, আগাম আলু, মরিচ ও চিনা বাদাম, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

সর্বশেষ খবর