বুধবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

কৃষি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসব

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

কৃষি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসব

টাঙ্গাইলের মধুপুরে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না কৃষি জমির মাটি কাটা ও বিক্রি। চলছে মাটি লুটের মহোৎসব। রাত-দিন বিরামহীনভাবে চলছে মাটি লুট আর মাটি খেকোদের রমরমা বাণিজ্য। মাটি খেকোদের ভয়াল থাবায় কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট। স্থানীয়দের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেপরোয়া মাটি খেকোদের ফাঁদে পড়ে কৃষি জমি হারাচ্ছে কৃষকরা। দিন দিন এলাকায় আবাদি কৃষি জমি কমে যাওয়ার কারণে হতাশ হয়ে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা। মাটি ব্যবসায়ীদের দাপটে স্থানীয় সাধারণ কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না, উল্টো তাদের ফাঁদে পড়ে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। এ ঘটনায় এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। কৃষি জমি রক্ষার স্বার্থে ইটভাটাসহ অন্যান্য মাটির ব্যবসা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, মধুপুর উপজেলার আশ্রা গ্রামের আফিজুল, নুরুল ইসলাম, মুসা, হলুদিয়ার ফরমান, জোয়াহের, হোসেন আলী, মোটেরবাজারের শামীম, বিদ্যুৎ, ছলিমের বাজারের লিটন, গাজী, নেদুরবাজারের সাখাওয়াত, রিয়াজ, বিল্লাল। কুড়ালিয়ার সফিকুল ইসলাম, দুখু মিয়া, গারোবাজারের পোলট্রি দুলাল, ইদ্রিস, মিস্টার, সেন্টু খাঁ, রহিম, জামাল, আলমগীর খাঁ, ফারুক সরকার, খোকন মিয়া, মহিষমারার লিয়াকত আলী, শুভ, লাল মিয়া। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি এলাকায় মাটি লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। স্থানীয়রা তাদের দাপটে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। শুধু কৃষি জমিই নষ্ট হচ্ছে না রাতদিন দ্রুত গতিতে ড্রামট্রাক চলার কারণে বায়ু ও শব্দ দূষণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়াও জটাবাড়ী, বৃত্তিবাড়ী, নাগবাড়ী, দুর্গাপুর, জয়নাতলী, ধামালিয়া ধরাটিসহ বিভিন্ন গ্রামে রাত দিন চলছে এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে কৃষি জমির মাটি লুটের মহোৎসব। এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে কৃষি জমির টপসয়েল ও লাল মাটি কাটা হচ্ছে। কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি ট্রাকচুক্তি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্যে মেতে উঠেছে মাটি খেকোরা। এসব মাটি বাড়িঘর ও ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে। কৃষি জমির টপসয়েল  কেটে ১০ চাকার ড্রামট্রাক, হাইড্রোলিক ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটা ও বাড়ি-ঘরে মাটি তোলাসহ বিভিন্ন কাজে মাটি স্থানান্তর করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণির দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে ফসলি জমির মাটি বিক্রিতে উৎসাহিত করছেন। কৃষকরা ফাঁদে পড়ে নগদ টাকার আশায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে কমছে ফসলি জমি। স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ব্যাপক পরিমাণে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে দিন দিন ধান, আনারস, কলাসহ কৃষি ফসলের আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। অনেক সময় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে দিনের আলোতে নয়, রাতের আঁধারেও চলে মাটি কাটা। স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়কে রাত দিন শত শত মাটির ট্রাক যাতায়াতের ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। গাড়ি থেকে পাকা সড়কে পড়ে যাওয়া মাটি বৃষ্টির সময় কার্পেটিং উঠে যায়। দুর্ঘটনায় পতিত হয় ছোট ছোট যানবাহন।

এসব তথ্য স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। মহিষমারা ছলিমের বাজারের মাটি ব্যবসায়ী গাজী জানান, তিনি ইটভাটায় মাটি কাটার জমি বন্দোবস্ত করে দেওয়ার সুবাদে কমিশন পান। বর্তমানে বড়বাইদ এলাকায় তার এস্কেভেটর ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, প্রতি হাইড্রোলিক ট্রাক মাটি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা ধরে বিক্রি করছে। মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা ইয়াসমীন জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর