আধুনিকতায় ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। মানুষের রুচির পরিবর্তন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কারণে এখন আর কেউ মাটির ঘরে থাকতে চান না। জানা গেছে, এক সময় ভারত সীমান্তঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটিতে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষেরই ছিল মাটির ঘর। এখন সেই দৃশ্য পাল্টে গেছে। উপজেলার প্রবীণরা জানান, আগে উপজেলার খাটিঙ্গা, মকুন্দপুর, দাড়িয়াপুর, কামালমোড়া, সেজামোড়া, ভিটি দাউদপুর, দুরানাল, কচুয়ামোড়া, বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, বক্তারমোড়া, ছতরপুর, দুলালপুর, আদমপুর, শ্রীপুর, পাইকপাড়া, পাঁচগাঁও, বাগদিয়া, হরষপুর, সোনামোড়া, বড়চাল, মেঘশিমুল, মেরাশানী, রানুর বাজার, আলীনগর ও কাঞ্চনপুনসহ বিভিন্ন গ্রামে ছিল মাটির ঘর। ওইসব গ্রামের হাতেগোনা কিছু বাড়িতে এখন মাটির ঘর থাকলেও অধিকাংশ বাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা ও সেমিপাকা ঘর। এলাকাবাসী জানান, উপজেলার যেসব জায়গায় লাল মাটি ও এঁটেল মাটি পাওয়া যেত সেসব এলাকার লোকজনই বাড়িতে মাটির ঘর বানাতেন। লাল ও এঁটেল মাটি ভিজিয়ে প্রথমে প্যাক করা হতো। সেই প্যাক দিয়ে তৈরি হতো ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল। প্রতিবার দুই-তিন ফুট উঁচু দেয়াল করে তা পাঁচ-ছয় দিন রোদে শুকানো হতো। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১০-১২ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা হতো। পরে দেয়ালের ওপর টিনের চালা বা ছন দিয়ে ছাউনি করা হতো। প্রতিটি ঘর নির্মাণে সময় লাগত দুই-তিন মাস। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘরের ভিতরের দিকে ধানের তুষ দিয়ে দেয়ালের ওপর প্রলেপ দেওয়া হতো। বাইরের দিকে দেওয়া হতো চুনের প্রলেপ বা আলকাতরা। বন্যা বা ভূমিকম্প না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকত। হরষপুর ইউনিয়নের নিদারাবাদ গ্রামের দেয়ালি (মাটির ঘর নির্মাণ কারিগর) নোয়াজ আলী জানান, মাটির ঘর তৈরির উপযুক্ত সময় কার্তিক মাস। কারণ এ সময়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে না।
তিনি বলেন, আমরা প্রতি হাত ঘর নির্মাণে ১০ টাকা নিতাম। অনেক সময় ৫-৬ হাজার টাকা চুক্তিতেও ঘর নির্মাণ করে দিতাম। মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করে না। আমরা এই পেশা ছেড়ে দিয়েছি। উপজেলার বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন বলেন, লাল ও এঁটেল মাটির অভাব, মাটির ঘর তৈরির কারিগর সংকটের কারণে মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করতে চায় না। ইছাপুরা ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বকুল বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে। তাই এখন আর মাটির ঘরে বসবাস করতে চায় না।