বুধবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মধুর খোঁজে মাঠে মাঠে

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

মধুর খোঁজে মাঠে মাঠে

বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হলুদের সমারোহ। তারই মাঝে পর পর সাজানো সারি সারি বাক্স। ভিতরে গুন গুন করছে অসংখ্য মৌমাছি। কেউ আবার ফুলের সঙ্গে মিতালি করে মধু সংগ্রহ করে ফিরছে ওই বাক্সে। রোদ ঝলমল দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌমাছিরা উড়ে বেড়াচ্ছে মাঠের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। হলুদ রঙের ফুলে ভরা সর্ষে খেত দেখে চলছে দিনভর দাপাদাপি। মধু সংগ্রহের ব্যস্ততা। সূর্য ডোবার আগে ফের খানিকটা মিছিলের ঢঙে উড়ে এসে ওই মৌমাছিরা ফের যে যার বাক্সে আশ্রয় নিচ্ছে। নওগাঁর মান্দার মাঠে মাঠে অতিথি মৌমাছির এমন আগমনে মজেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। এবার মান্দার অধিকাংশ মাঠেই সরিষার চাষ হয়েছে। যে মাঠে সরিষার চাষ বেশি হয়েছে, সেখানেই মৌচাষিরা বসিয়েছেন তাদের ভ্রাম্যমাণ খামার। উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের কইকুড়ি মাঠে মধু সংগ্রহ করতে মৌমাছির খামার বসিয়েছেন কামরুজ্জামান শরিফ, মামুনুর রশিদ ও দেলোয়ার হোসেন। মধু সংগ্রহ নিয়ে সেখানেই কথা তাদের সঙ্গে। রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার বাসিন্দা কামরুজ্জামান শরিফ ১৫ বছর ধরে মধু সংগ্রহ করে জীবীকা নির্বাহ করে আসছেন। প্রথমে সনাতন পদ্ধতিতে গ্রামে গ্রামে মৌমাছির চাকে গিয়ে মধু সংগ্রহ করতেন তিনি। ২০০৫ সালে দিনাজপুরের বিসিক থেকে মৌমাছি চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এরপর থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৌমাছির চাষ শুরু করে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। পরে তার দেখাদেখি মামুনুর রশিদ ও দেলোয়ারের মতো অন্য আরও অনেক যুবক উদ্বুদ্ধ হয়ে এই পেশায় ঝুঁকেছেন। কামরুজ্জামান বলেন, বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে সেখান থেকে দেশি মৌমাছিসহ পাঁচ ফ্রেমের মাত্র পাঁচটি বাক্স দিয়ে শুরু করি মৌমাছির চাষ। অল্প কিছু দিনের মধ্যে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করি। এরপর থেকে এটিকেই জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন হিসেবে ধরে নিয়েছি। এখন আমার খামারে বিভিন্ন আকৃতির মোট ১০০টি বাক্স রয়েছে। মৌমাছিগুলো সব বিদেশি।

বিসিক থেকে নেওয়া রাশিয়ান মৌমাছি এপিস মেলিফেরা এখন চাষ করি। সরিষা, লিচু, তিল, কালিজিরাসহ যখন যে ফুলের মৌসুম আসে তখন সেসব মাঠে কিংবা বাগানে আমরা খামার নিয়ে ছুটে যাই। এভাবেই সারা বছর মাঠে মাঠে ও বাগানে ঘুরে ঘুরে জীবিকার সন্ধান করি। কামরুজ্জামানের ব্যবসায়িক অংশীদার মামুনুর রশিদ ও দেলোয়ার রাজশাহীর বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌমাছি চাষ শুরু করেছেন। ২০১২ সাল থেকে শুরু করে মামুনুরের খামারে এখন বিভিন্ন আকৃতির ৩০টি মৌমাছির বাক্স রয়েছে। আর দেলোয়ারের বাক্স রয়েছে ২০টি। তাদের বাড়িও রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায়। দুই বছর ধরে কামরুজ্জামানের সঙ্গে যৌথভাবে মধু সংগ্রহ করছেন তারা। যৌথ খামারে মৌমাছির বাক্সের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে অংশীদারের ভাগ পান তারা। এখন পর্যন্ত তারা দুবার খামার থেকে মধু সংগ্রহ করেছেন। সরিষার এই মৌসুমে ছয় থেকে সাতবার খামার থেকে মধু সংগ্রহ করবে তারা। এই মৌসুমে ১১০ থেকে ১২০ কেজি মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন। দুই মাসে তারা ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মধু বিক্রি করতে পারবেন। মৌসুম শেষে এই মধু সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী দেলোয়ারের কাছে বিক্রি করবেন। তিনি আবার ভারতের ডাবর আমলা কোম্পানির কাছে বিক্রি করবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, জেলায় এ বছর সরিষার চাষ ভালো হয়েছে। আমরা উচ্চ ফলনশীল বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫ মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করেছি। চাষিরা সরিষার ভালো ফলন পাচ্ছে। পাশাপাশি বাড়তি মুনাফার জন্য মৌচাষিরা এসেছেন। চলতি বছর মান্দায় প্রায় ৬০০ মৌমাছির বাক্স নিয়ে এসেছেন মৌচাষিরা। মৌচাষিরা জানিয়েছেন, তারা মাত্র ১৫-২০ দিনে উপজেলা থেকে একেকজন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করে নিয়ে যাবেন। আর মৌমাছির কারণে ফুলের পরাগায়ণ ভালো হওয়ায় সরিষার ফলনও বেশি হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর