মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

লোপাট হচ্ছে ফসলি জমির মাটি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

লোপাট হচ্ছে ফসলি জমির মাটি

কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার ফসলি জমির মাটি রাতের আঁধারে লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। এ সময় ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয় অস্ত্রধারীরা। বাধা দিলে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। লাকসাম, সদর দক্ষিণ, লালমাইসহ বিভিন্ন উপজেলায় মাটি লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশি আলোচনায় সদর দক্ষিণ উপজেলা। এখানে প্রতিরাতে ফসলি জমির মাটি লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। অস্ত্রধারীদের পাহারায় রাত ১১টা থেকে ভোর পর্যন্ত ফসলি জমির মাটি ডাকাতি করা হয়। সরেজমিন দেখা যায়, সদর দক্ষিণ উপজেলার পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়নের দুর্ল্লভপুর গ্রামের ফসলি জমির মাটি লুট হয়ে গেছে।  রবিবার রাতেও দুর্ল্লভপুর গ্রামের ফসলি মাঠে ৪৬ শতক জমির মাটি লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ওই মাঠের ৯৫ শতাংশের বেশি জমির মাটি এরই মধ্যে লোপাট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি মাটি লোপাট করা হয়েছে এফআইসিএল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের। গত রবিবার রাতে একটি ফুটওয়্যার কোম্পানির জমির মাটি লুট হয়। এছাড়া বিভিন্ন কৃষকের জমির মাটি লুট হয়ে যাচ্ছে। ফসলি জমি ছাড়া পাশের বোয়ালজোর খালের পাড়সহ ভিতর থেকেও মাটি লোপাট করা হচ্ছে। স্থানীয় এলাকার কৃষক আবদুস সাত্তার বলেন, ৭০ বছরের জীবনে এভাবে কৃষি জমির মাটি ডাকাতি হতে দেখিনি। তাদের বাধা দিলে কৃষকদের উপর নেমে আসে নির্যাতন। এফআইসিএল কোম্পানির অন্তত ৫০০ শতক জমির মাটি লোপাট করেছে। লালমাই ফুটওয়্যারের নৈশ প্রহরী অহিদুর রহমান বলেন, দুর্ল্লভপুরে আমাদের প্রজেক্টের পাশে দুই ভাগে ছিল ওই ৪৬ শতক কৃষি জমি। গত রবিবার রাত ১১টার দিকে পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়নের গঙ্গানগর সুর্বণপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে বাহাদুর ইসলামের নেতৃত্ব একদল লোক আমাদের কোম্পানির মালিকানাধীন জমির মাটি লুট করেছে। বাহাদুরের সহযোগী হিসেবে সেখানে ছিল পাশের ভাটপাড়া গ্রামের মোকারম আলীর ছেলে মো. মিজান ও ফারুক। তারা ভেকু দিয়ে মাটি কেটে জমিতে পুকুরের মতো গর্ত করেছে। বাধা দিতে গেলে তারা হত্যার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। লালমাই ফুটওয়্যারের প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, গত প্রায় ২০ দিন আগেও বাহাদুর ইসলামের নেতৃত্বে আমাদের একটি জমির ১০ শতক কেটে পুকুর বানানো হয়েছে। পরে আমরা এ নিয়ে যোগাযোগ করলে বাহাদুর বলেছে- ভুলে আমাদের জমি কেটে ফেলেছে, আর এমন হবে না। রবিবার রাতে আমাদের পুরো জমির মাটি লুটে নিয়েছে তারা। আমরা এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব। উপজেলার পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসমত উল্লাহ হাসু বলেন, ওরা কৃষি জমির মাটি লুটপাট করছে। বাহাদুরসহ কয়েকজন এর সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে এসবের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছি। প্রশাসন যেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। অভিযুক্ত বাহাদুর ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যে এখানে কোনো মাটি কাটিনি। এর আগে একজনের কাছ থেকে কিনে কিছু মাটি এনেছি। আমি ছাড়াও এখানে মাটি কাটার কয়েকটি গ্রুপ আছে। এসব কাজ অন্য কেউ করতে পারে। আমার কোনো অস্ত্রধারী গ্রুপ নেই। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ ঘোষ বলেন, আমরা কিছুদিন আগেও ওই এলাকায় এসব লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি। এ বিষয়ে নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছি। শিগগিরই এসবের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালাব।

সর্বশেষ খবর