শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় বগুড়ার শিল্প মালিক শ্রমিক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় বগুড়ার শিল্প মালিক শ্রমিক

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের অপেক্ষার প্রহর গুনছে বগুড়ার শিল্পকারখানার মালিক শ্রমিকরা। এ সেতু খুলে গেলে কপাল খুলে যাবে ব্যবসায়ীদের। এখানকার উৎপাদিত কৃষিযন্ত্রাংশ, সবজি, ধান, পাট, লাল মরিচ আগের থেকে সহজে ও কম খরচে পৌঁছানো যাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কৃষি, শিল্পকারখানা মালিকদের ব্যবসার প্রসার ঘটবে। জানা যায়, শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় পঞ্চাশের দশকে প্রতিষ্ঠিত সব ভারী শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সত্তরের দশকে জেলায় মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এ কারণে ১৯৬৪ সালে শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় সাড়ে ১৪ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় বিসিক শিল্পনগরী। স্বাধীনতার পরপরই শেষ হয়ে যায় প্লটগুলো। উদ্যোক্তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮০ সালে আরও ১৮ দশমিক ৬৭ একর জায়গা সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু তার বরাদ্দও ১৯৯০ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এভাবে দুই দফায় নির্মিত মোট ২৩৩টি প্লটে ৮৫টি শিল্প ইউনিট গড়ে ওঠে। শিল্প ইউনিটে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে কৃষিযন্ত্রাংশ। এই যন্ত্রাংশগুলো সড়ক পথে ময়মনসিংহ, সিলেট, জামালপুর, টাঙ্গাইল, ঢাকা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরের জেলায়  বিক্রি হয়ে আসত। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে সড়ক পথ না থাকায় এবং নদী পথের কারণে সে অঞ্চলে বগুড়ার তৈরি কৃষিযন্ত্রাংশ ও কৃষি পণ্য পরিবহনে তেমন সাড়া ছিল না। কিন্তু এবার পদ্মা সেতুর কারণে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে কৃষক ও কৃষিযন্ত্রাংশ তৈরির শিল্পের মালিক শ্রমিকরা। বগুড়া বিসিকের ডিজিএমের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢালাই, ওষুধ, প্লাস্টিক, ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট, অ্যালুমিনিয়াম, কীটনাশকসহ বগুড়া বিসিকে মোট কারখানা রয়েছে ৯৩টি। এসব কারখানায় প্রচুর পরিমাণে কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি হয়ে থাকে। আগে যন্ত্রাংশগুলো দক্ষিণ অঞ্চলের নদী পথে তেমন একটা পরিবহন হতো না। এখন থেকে পদ্মা সেতু খুলে গেলে বগুড়ার কৃষিযন্ত্রাংশ দক্ষিণ অঞ্চলে বিক্রি শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে বগুড়ার শিল্পকারখানার প্রসার ও ব্যবসার লেনদেন বাড়বে। জেলার বিসিক শিল্পনগরীর মালিক ও কারখানা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরাতন লোহা গলিয়ে বগুড়ায় ফাউন্ড্রি শিল্পের মাধ্যমে কৃষি কাজে ব্যবহার করার মতো বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়। জাহাজ ভাঙা লোহা, বাসাবাড়ি ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কারখানার লোহা, পুরাতন মোটর পার্টস গলিয়ে কৃষি, বাসাবাড়ি, বাস-মিনিবাস, ছোট বড় ইন্ডাস্ট্রি ও বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কলকারখানায় ব্যবহার যোগ্য যন্ত্রাংশও তৈরি হচ্ছে। কারখানায় তৈরি হচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনের সেচ পাম্প, লায়নার, পিস্টন, হস্তচালিত টিউবওয়েল, পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, লেদ মেশিন, গাড়ির ব্রেক ড্রাম, করাত কল, ফ্লাওয়ার মিলসহ অন্যান্য মেশিনের যন্ত্রাংশ।

এসব যন্ত্রাংশ সারা দেশেই চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ অঞ্চলে আগে তেমন কৃষি যন্ত্রাংশ সরবরাহ হতো না। পদ্মা সেতু খুলে গেলে এই যন্ত্রাংশগুলো দক্ষিণ অঞ্চলে বিক্রির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় উৎপাদিত লাল মরিচ, আলু ও পাটের চাহিদা সারা দেশেই। দক্ষিণ অঞ্চলেও কৃষিপণ্য থাকলেও বগুড়ার মানের মতো হয় না। পদ্মা সেতু খুলে গেলে বগুড়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য লাল মরিচ, আলু খাবার হিসেবে দক্ষিণ অঞ্চলে চাহিদার সৃষ্টি হবে। এতে করে বগুড়ার কৃষি পণ্য পরিবহন সহজ হবে এবং কৃষকরা আরও ভালো দাম পাবে। আগে শুধু ঢাকা পর্যন্ত বা নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বগুড়ার লাল মরিচ ও আলু কেনাবেচা হতো। এখন পদ্মা সেতুর কারণে বগুড়ায় উৎপাদিত আলু ও লাল মরিচ দক্ষিণ অঞ্চলেও বিক্রি হবে।

সর্বশেষ খবর