শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

মেরামত হয়নি শ্যামনগরের দুর্গাবাটি বাঁধ

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

মেরামত হয়নি শ্যামনগরের দুর্গাবাটি বাঁধ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর দুর্গাবাটি উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৭০০ চিংড়ি ঘের ও কাঁকড়া খামার ভেসে গেছে। শুধু মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এতে কাঁকড়া চাষি ও মৎস্য ঘের মালিকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। গত ১৪ জুলাই শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর ভেঙে যাওয়া দুর্গাবাটি উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধটি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ১৬ দিনে মেরামত করতে পারেনি। ফলে এখনো দিনে দুবার জোয়ার-ভাটার কারণে বুড়িগোয়ালিনীর ১৫টি গ্রাম পানির নিচে থইথই করছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত অতন্ত ২০ হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদাররা ভেঙে যাওয়া ২০০ ফুট বাঁধ বাঁশ, খুঁটি, বল্লি ও বালুর বস্তাসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে রিংবাঁধ দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নদীর তীব্র স্রোত ও জোয়ারের কারণে দ্রুত বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাঁধটি পুরোপুরি মেরামত হতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের। বাঁধ মেরামত না হওয়ায়  খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের তীব্র স্রোতের পানিতে এখনো ১৫টি গ্রাম নিমজ্জিত রয়েছে। এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চিংড়ি চাষিরা। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, শ্যামনগরের উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি ঢুকে মুহূর্তে পানিতে ভেসে গেছে ছোট-বড় ১ হাজার ৮৩৫ হেক্টর চিংড়ি ও কাঁকড়া খামার। এর মধ্যে পুকুর রয়েছে ১০০টি। পানিতে প্লাবিত হয়ে চিংড়ি, কাঁকড়া, সাদা মাছ, মাছের পোনাসহ আনুষঙ্গিক ৮ কোটি ৪১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে খুব শিগগিরই বাঁধটি সংস্কার করা না হলে জোয়ারের পানিতে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হলে সে ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রস্তুত করছে। তালিকা প্রস্তুত সম্পন্ন হলে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রণোদনার চেষ্টা করবেন। এদিকে গত ৫ দিনেও বাঁধ মেরামত না হওয়ায় এলাকায় নিরাপদ পানি ও খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার ও উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শুকনা খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। কিন্তু সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নারীরা। চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। লোনা পানির কারণে তাদের প্রস্রাব ও পায়খানার অসুবিধা হচ্ছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, বাঁধ ভেঙে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষি ও কাঁকড়ার প্রজেক্টের খামারিরা। তাদের লাখ লাখ টাকার চিংড়ি ভেসে গেছে ও কাঁকড়ার সেড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি প্রণোদনা ছাড়া এ মুহূর্তে ঘের মালিক ও কাঁকড়ার খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পাউবোর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্তা, রশি, বাঁশ ও পেরেকসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ৬০০ ফুট এলাকাজুড়ে পাইলিং ও রিংবাঁধের কাজ চলছে। নদীর জোয়ারের ক্ষিপ্রতা কমে গেলে বাঁধ মেরামত করা সহজ হবে। আশা করছি নদীর পানি কমে গেলে দু-এক দিনের মধ্যে রিংবাঁধ দেওয়া পুরোপুরি সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর