মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

রেলের জ্বালানি তেল চুরির মহোৎসব

জমির বেগ, ফেনী

রেলের জ্বালানি তেল চুরির মহোৎসব

রেলওয়ের ফেনী অংশ থেকে দৈনিক ৩ হাজার ২০০ লিটার জ্বালানি তেল চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রতিদিন ফেনীর শর্শদী স্টেশনের আশপাশ এলাকা থেকে তেল চুরি করছে। যার বর্তমান  বাজারমূল্য ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। মাসিক হিসাবে যার দাম দাঁড়ায় ১ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদিত কিছু স্টেশন ছাড়া অন্য কোথাও ট্রেন থামার নিয়ম না থাকলেও ফেনীর শর্শদী স্টেশনে পণ্যবাহী ট্রেন প্রতিদিন থামছে ১০-১৫ মিনিটের জন্য।  শর্শদী স্টেশনের একজন কর্মকর্তা তেল চুরির বিষয়টি রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিখিত আকারে জানিয়েছেন বলে জানা যায়। চোরের সিন্ডিকেটটি খুবই প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। জানা যায়, চট্টগ্রামের গুডস পোর্ট ইয়ার্ড থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে দৈনিক ৮টি মালবাহী ট্রেন ছেড়ে যায়। যাওয়ার আগে প্রতিটি ট্রেনে জ্বালানি তেল ভর্তি করা হয়। ট্রেনের গার্ড-চালক ও সিজিপিওয়াইর কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে অনেক ট্রেনে বাড়তি তেল নেওয়া হয়। তারপর শর্শদী স্টেশনের আউটার সিগন্যালের মূল পয়েন্টে ট্রেন ১০-১৫ মিনিটের জন্য থামিয়ে ট্রেনের তেলের ট্যাংকে পাইপ লাগিয়ে ড্রামে করে তেল চুরি করে সিন্ডিকেটটি। একটি ট্রেন থেকে কম হলেও দুই ড্রাম বা ৪০০ লিটার তেল চুরি করে সিন্ডিকেট। একটি ট্রেনের তেলের ট্যাংকে ৩ হাজার লিটার পর্যন্ত তেল নেওয়া যায়। সে হিসেবে ৮টি ট্রেন থেকে প্রতিদিন ৩ হাজার ২০০ লিটার তেল চুরি করা হচ্ছে। এ কারণে রেলওয়ে লোকসান থেকে বের হতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। জানা যায়, স্থানীয় তিনজন প্রভাবশালী তেল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় ওই স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কিছু করতে পারছেন না। রেলের নথিপত্রে জ্বালানি ব্যবহারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই বলে জানা যায়। নির্দিষ্ট সংখ্যক বগি নিয়ে একটি ট্রেন চললে যে পরিমাণ তেল খরচ হয়, তার একটা হিসাব ধরে যুগের পর যুগ চলছে। মৌখিক এ হিসাবকে পুঁজি করে চোর চক্রের সঙ্গে দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে প্রতিদিন হচ্ছে তেল চুরি। মূলত চুরির কারণেই তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই রেলের। সম্প্রতি সিজিপিওয়াই দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) অভিযান চালিয়ে ট্রেন থেকে তেল চুরির সত্যতা পেয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৮০০ লিটার তেল চুরির প্রমাণ পায় দুদক।

সর্বশেষ খবর