বগুড়া অঞ্চলে স্বপ্নের চার লেন সড়কের সমস্যার শেষ নেই। জমি অধিগ্রহণের ঝামেলা মিটিয়ে সচল হতে না হতেই এবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বগুড়া অংশের কাজে প্রায় স্থবিরতা এসেছে। কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। ধীরগতি হওয়ায় মহাসড়কে দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। যে গতিতে কাজ চলছে তার চেয়েও আরও বেশি গতিতে কাজ করার সুযোগ আছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে সাসেক এবং বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডরে (বিসিআইএম) নতুন করে বাংলাদেশের আটটি মহাসড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে। এই সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ কিলোমিটার। ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি এর একটি অংশ। এই সড়কের মাধ্যমে রংপুর-সৈয়দপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ করা যাবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ করতেও রুটটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় এ কাজ বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানার প্রসারসহ ভারত-নেপালের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে চার লেন হচ্ছে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর মহাসড়ক। রংপুর মহাসড়ক থেকে বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত-নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মহাসড়কটি। জানা যায়, বগুড়া অঞ্চলে চার লেনের প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২। এই প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে বগুড়া হয়ে রংপুরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। বগুড়া সীমানায় জেলার চান্দাইকোনা থেকে রহবল পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার পড়েছে। এই ৬২ কিলোমিটারে কাজ চলছে ধীরগতিতে। ভূমি অধিগ্রহণের সময় নানা জটিলতা দেখা দিলেও সেই জটিলতা কেটে উঠে আবার জ্বালানি তেল, রড, সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধির ফাঁদে পড়ে জটিলতা বেড়েছে। এর সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ সরঞ্জাম ও শ্রমিক কম থাকায় কাজ চলছে ঢিমেতালে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরে থেকেই চার লেনের ঠিকাদাররা কাজের ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বগুড়ার শেরপুর থেকে শাজাহানপুরের বনানী পর্যন্ত সড়কের চার লেন উন্নয়ন কাজ ৮ নম্বর প্রকল্পের আওতায়। এই কাজ করছে সিপিসিএল তান্তিয়া জেভি কোম্পানি। প্রথমে নির্ধারিত সময়ে এই কাজ শতভাগ হওয়ার কথা থাকলে ৮ নম্বর প্রজেক্ট অংশে কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ।
এই জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৯ মাস বসে ছিল। তবে এসব জটিলতা ছাড়িয়ে এবার মুখ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার বিষয়টি। যে কারণে বেকায়দায় পড়তে হয় ফোর লেন সড়ক নির্মাণের ঠিকাদারের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর। তাদের নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে ব্যয় বেড়ে গেছে। এমন কারণ দেখিয়ে তারা কাঁচামাল আনার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। যে কারণে ধীরগতিতে চলছে কাজ। ফোর লেন সড়ক নির্মাণের প্রকল্প সূত্র বলছে, ক্রয়মূল্যের প্রভাব নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় পর্যবেক্ষণ করছে। এ ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের ভিত্তিতে দর সমন্বয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে ঠিকাদারের চিন্তার কোনো কিছু নেই। সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী জয়প্রকাশ চৌধুরী জানান, ফোর লেনের এই সড়কের কাজ এর মধ্যে ৫১ শতাংশের বেশি কাজ হয়েছে। করোনা, বর্ষাকাল, ঈদ ছুটি মিলিয়ে কয়েকটা দিন আগে কাজের স্থবিরতা ছিল। এখন আর নেই। এখন কাজে আবার গতি বেড়েছে। জ¦লানি তেল বা নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি হলেও নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তি মোতাবেক কাজ করে দেবেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কোনো চুক্তি ১৮ মাসের বেশি হলে এবং বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেলে নিয়মাবলি মতে তার নির্মাণ ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। সে হিসাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো চিন্তার কারণ নেই। তিনি জানান, প্রকল্পটির আগে যে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল এখন তা থেকে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯০ কিলোমিটার সড়ক নয়টি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। এই সম্প্রসারণ কাজে ২০১৬ সালে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে কিছু সংযুক্তির ফলে বেড়েছে ব্যয়। এখন একই সড়কে নির্মাণ খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এই সড়ক মোট নয়টি ভাগে ভাগ করে উন্নয়ন কাজ চলছে। নতুন করে এই সড়কের সঙ্গে কয়েকটি ফ্লাইওভার তৈরির বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানান, চার লেনের সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করা হোক। মহাসড়কের বেশির ভাগ জায়গায় খননের ফলে যানবাহন গর্তে পরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে দূরের পথে দ্রুত পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না। যাত্রী ও বাস স্টাফদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃস্টি হচ্ছে। এ ছাড়া মালিকদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যে গতিতে কাজ হচ্ছে এর চেয়েও বেশি গতিতে কাজ করা সম্ভব।