আমন মৌসুমে পটাশ সারের সংকটে ভুগছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক। সারটির অভাবে শুধু আমন ধান নয়; শীতকালীন আগাম সবজির চাষ নিয়ে চিন্তিত জেলার কৃষক। কৃষকদের অভিযোগ, ডিলারদের কাছে ধরনা দিলেও মিলছে না সার। আর ডিলাররা বলছেন, নেই কোনো পটাশ সারের বরাদ্দ। এদিকে খুচরা বাজারেও মিলছে না কোনো সার। কখনো বা মিললেও নিতে হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্যে। সারের এমন পরিস্থিতিতে আমন ধান উৎপাদন কম ও শীতকালীন আগাম সবজিতে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় নেই কোনো সারের সংকট। ইতোমধ্যে এসেছে পটাশ সার। অন্যদিকে প্রশাসন বলছে, সারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে প্রশাসন। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই সার নিয়ে বিপাকে জেলার কৃষক। খরার কবলে পড়ে জমিতে সময় মতো রোপা ধান রোপন করতেও পারেননি অনেক কৃষক। এমন অবস্থায় সারের সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। ইউরিয়া সার কৃষকেরা পেলেও নন ইউরিয়া এমওপি (পটাশ) সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে মাসের শুরু দিক থেকেই। এতে চরম বিপাকে চাষিরা। এদিকে ডিলাররা বলছেন, বিএডিসি থেকে পটাশ সারের বরাদ্দ না থাকায় কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে না সেই সারটি। এদিকে বিএডিসি ও কৃষি বিভাগ কর্তৃপক্ষ বলছেন, কিছুদিন পটাশ সারের সমস্যা হলেও ইতোমধ্যে জেলায় এসেছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশ সার। অল্প দিনের মধ্যেই ডিলারদের মাধ্যমে চাষিদের দেওয়া হবে সেই সার। অন্যদিকে কিছু খুচরা ব্যবসায়ীকে জরিমানা করার পরে জেলায় বন্ধ হয়েছে খুচরা ব্যসরায়ীর সার বিক্রি। তবে অনেক আবার বেশি দামে বিক্রি করছেন সার। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএডিসির তথ্য মতে, টিএসপি-৯১৭.২৫ মেট্রিক টন, এমওপি-১৬৯.৮০ মেট্রিক টন, ডিএপি-১০৩৭.৭৫ মেট্রিক টন সার মজুদ রয়েছে। জেলায় মোট সারের ডিলার রয়েছে ১৪৯ জন। আর বিসিআইসির তথ্য মকে, তাদের গোডাউনে ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন সার মজুদ রয়েছে। জেলায় তাদের মোট সারের ডিলার রয়েছেন ৬৩ জন। সদর উপজেলার রামপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সোবহান বলেন, ডিলারদের কাছে সার কিনতে গেলে বলে সার নাই। আমরা সার ছাড়া কিভাবে চাষাবাদ করব। মোহাম্মদ ইউনুস আলী নামে আরেক কৃষক বলেন, ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা পটাশ (এমওপি) সার খুচরা বাজারে কিনতে গেলে ১ হাজার ৮০০ ও ইউরিয়া ১ হাজার ৪ টাকা নিচ্ছে। তাও আবার প্রথম ধাপে সার পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন বেশি দামেও সার পাচ্ছি না। বাজারে সার নেই। তবে ডিলাররা বলছেন, চলতি মাসে কৃষি সম্প্রসারণ থেকে পটাশ সারের বরাদ্দ না পাওয়ায় কৃষকদের দেওয়া হয়নি এই সার। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ডিলাররা। তাদের দাবি সরকার নির্ধারিত দামেই দেওয়া হচ্ছে সার। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন ডিলাররের কাছে বেশি দামে নিতে হচ্ছে বলেই খুচরা বাজারে কিছুটা বেশি দাম নেওয়া হয়েছিল। তবে জেল জরিমানা করার পর থেকে খুচরা বাজারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সার বিক্রি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবদুল আজিজ বলছেন, পরিবহনের জন্য এমওপি সার সময় মতো আসতে না পারায় সংকট দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন এমওপিসহ সকল প্রকার সার পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ আছে। ঠাকুরগাঁও বিএডিসির উপ-সহকারী জিল্লুর রহমান বলছেন, কিছুদিন আগে পটাশ সারের কিছুটা সমস্যা থাকলেও বর্তমানে মজুদ রয়েছে সার। বরাদ্দ দিলেও ডিলারদের মাধ্যমে সেগুলো দেওয়া হবে। কৃষকদের হতে হবে না আর হয়রানির শিকার। অন্যদিকে সার ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো কৃষকের ক্ষতি করতে না পারে সে বিষয়টি সব সময় মনিটরিং করছেন বলে জানলেন ঠাকুরগাঁও সদর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান।