রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কেরানীগঞ্জে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যার আসামি গ্রেফতার

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

কেরানীগঞ্জে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যার আসামি গ্রেফতার

ঢাকার কেরানীগঞ্জে প্রতিবন্ধী লতা সরকারকে ধর্ষণ করে শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার মামলার মূল আসামি সুজন মিয়াকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুর ১২টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী লতা সরকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কলাতিয়া ও একই গ্রামে আসামি সুজন মিয়া বসবাস করত। সুজন একটি বালুর গদিতে কাজ করত। সুজন ইশারা-ইঙ্গিতে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। সে তার প্রস্তাবে রাজি হয়। সেদিন বিকালে সুজন বালির গদির খাটে লতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। তারপর লতা সুজনকে বিয়ের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে থাকে। লতা সুজনকে বলে যে, যদি তাকে নিয়ে ভেগে না যায় তাহলে সে শারীরিক সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে। সুজন তখন লতাকে কাপড়-চোপড় নিয়ে রাতে গাবগাছ তলায় অপেক্ষা করতে বলে। সুজন লতাকে দূরে কোনো নির্জন জায়গায় নিয়ে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। ভিকটিম লতা সরকারের সঙ্গে হত্যার আগেও শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল। সেদিন লতাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে আটিবাজার এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানে ঘুরিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার শুভাঢ্যা সাবান ফ্যাক্টরি এলাকায় এনে হত্যার উদ্দেশ্যে রাস্তা থেকে ফেলে দেয়। লতা চিৎকার করলে গলা টিপে ধরে জমাট পড়া সিমেন্টের বস্তার ওপর মাথা রেখে ইট দিয়ে পিটিয়েছে। পরে লতা সরকাররে ব্যাগে থাকা কাপড় দিয়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ সুপার আরও বলেন, লতা সরকারের শরীর ৬৫% পুড়ে গেলেও সে হাতের ইশারায় ঘটনার বর্ণনা দিলে পুলিশ বাকপ্রতিবন্ধী বিশেষজ্ঞ এনে তার কথাগুলোর নোট নেন। পরে বিশেষজ্ঞ লতার কথাগুলো উপস্থাপন করেন। তার একদিন পর ভিকটিম লতা সরকারের মৃত্যু হয়। ভিকটিমের পরিবার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে ২ ডিসেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার তেগাছিয়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডে জড়িত আসামি সুজন মিয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত ছিল কিনা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞেসাবাদে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ তদন্ত) আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশিশরা হাবিবা খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেরানীগঞ্জ (সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি  মোহাম্মাদ শাহ জামান।

উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় দিকে ৯৯৯-এ কলের মাধ্যমে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সাবান ফ্যাক্টরি রোডের পাশে একজন মহিলার শরীরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় অগ্নিদগ্ধ মহিলাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতাল) ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে ভর্তি করে। অগ্নিদগ্ধ মহিলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, তিনি একজন বাকপ্রতিবন্ধী। তখন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ সিআইডির ক্রাইমসিনের মাধ্যমে বাকপ্রতিবন্ধী নারীর ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তার নাম-পরিচয় শনাক্ত করে। পরবর্তীতে পুলিশ ওই রাতেই ভিকটিম লতা সরকারের কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কলাতিয়ায় অবস্থিত তার পরিবারকে ঘটনার সংবাদ দেয়।

সর্বশেষ খবর