বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আখাউড়া লাগেজ পার্টির স্বর্গরাজ্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে কোনো ভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না লাগেজ পার্টির রমরমা ব্যবসা। লাগেজ পার্টির তৎপরতা আগের চেয়ে কয়েক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দিন দিন এ ব্যবসা যেন স্থলবন্দরে বৈধ হয়ে উঠেছে লাগেজ ব্যবসায়ীদের কাছে। ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে অফিস সহকারী সবাই লাগেজ ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত। স্থলবন্দরের কাস্টমস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শুল্ক গোয়েন্দাকে ম্যানেজ করে চলছে এ ব্যবসা। এই সুযোগে লাগেজ ব্যবসার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়ে উঠেছে আখাউড়া স্থলবন্দর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৈনিক ৪০০-৫০০ যাত্রী আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে কিছু ভারতীয় নাগরিক এবং বাংলাদেশি যাত্রী ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে কাপড়, চকোলেট, কসমেটিকস আর যাত্রীপ্রতি ১-২ বোতল মদ এ চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। পরে এসব পণ্য ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে নিয়ে যায়। অধিকাংশ সময় ট্যাক্স না দিয়ে চলে যায় ওই যাত্রীরা। স্থলবন্দর এলাকার ১০-১৫ জনের একটি গ্রুপ আছে তারাও এ ব্যবসা করে। কেউ কেউ চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে ‘ম্যানেজ’ করে ট্যাক্স কমিয়ে লাগেজ পার্টিকে সহযোগিতা করে। আবার অনেক সময় যাত্রী নিজেও কর্মকর্তাদের খুশি করে ট্যাক্স কমায়।

এতে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ৫৯৯ যাত্রীর জব্দকৃত মালামাল থেকে ১ কোটি ১১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ট্যাক্স (রাজস্ব) আদায় করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৩৯০ যাত্রীর জব্দকৃত মালামাল থেকে ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৯ টাকা ট্যাক্স আদায় করা হয়েছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কঠোর ও নিয়ম অনুযায়ী এ ট্যাক্স আদায় করলে বছরে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হতো।

একটি সূত্রে জানা যায়, আখাউড়া স্থল কাস্টমস স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নাজমুল হকের নেতৃত্বে রাজস্ব কর্মকর্তাদের সহকারীরা (সিপাহী) এসব ব্যবসায়ীদের সরাসরি সহযোগিতা করে থাকেন সুবিধার বিনিময়ে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় সময় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সুবিধার বিনিময়ে চেকপোস্ট থেকে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত এসব লাগেজ পৌঁছে দেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক লাগেজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ভারতীয় এক নাগরিক বলেন, বাংলাদেশের কাস্টমস কর্মকর্তারা প্রথমে মৌখিকভাবে বড় অঙ্কের টাকা ট্যাক্স দিতে বলে। এক-দুই ঘণ্টা পরে তাদের টাকা (ঘুষ) দিলে তারাই আবার ট্যাক্স অনেক কমিয়ে দেয়।  খবর নিয়ে জানা যায়, কলকাতা থেকে বিভিন্ন ধরনের মেয়েদের থ্রি-পিস, শাড়ি, ওড়না, ব্লাউজ, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, প্যান্ট এবং কসমেটিকস, চকোলেট, হরলিক্স, প্রাণিজ ওষুধ, বেল্টসহ অনেক নামি-দামি পোশাক ভারতের আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যায়। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন লাগেজ ব্যবসায়ীরা। এ স্থলবন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম থাকায় লাগেজ ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় রোড হলো এই স্থলবন্দর। আখাউড়া স্থল কাস্টমস স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, লাগেজ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাস্টমস কর্মকর্তারা টাকা নেন বিষয়টি সত্য নয়। প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুলতানপুর ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক হাসান উল্লাহ বলেন, লাগেজ পার্টি থেকে বিজিবির সদস্যদের টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।

সর্বশেষ খবর