বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মাদক-জুয়ার জমজমাট আসর

ফরিদপুর প্রতিনিধি

বেলা ১২টা বাজলেই গোল হয়ে বসে পড়ে জুয়াড়িরা। একাধিক ভাগে ভাগ হয়ে জুয়ার আসর চলে রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত। পাশাপাশি চলে মাদক বিক্রি ও সেবন। জুয়ার বোর্ড বসানো ও মাদক বিক্রির জন্য রয়েছে আলাদা লোক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের ভয়ে পালা করে তিনজন দায়িত্বে থাকে পাহারায়। জুয়া থেকে আয় ও মাদক বিক্রির টাকার যায় কয়েকজনের পকেটে। ফরিদপুর কার ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে দিনের পর দিন প্রকাশ্যেই চলছে এমন জুয়ার আসর ও মাদক বিক্রি ও সেবন। মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডটি শহরের গোয়ালচামট এলাকায় মূল সড়কের পাশে অবস্থিত। জানা যায়, মাইক্রোস্ট্যান্ডের মধ্যে দক্ষিণ পাশের একটি স্থানে বসে জুয়ার আসর। মূলত কার্ডের মাধ্যমে চলে জুয়া। রেন্ট-এ কারের চালকরা আসরের প্রধান জুয়াড়ি। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে আসে জুয়া খেলতে। প্রতিদিন ৩০-৪০ জন জুয়ার আসরে বসে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, জুয়া খেলে অনেক চালক একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। সংসার ভেঙেছে কারও কারও। অনেকের পরিবার মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতিতে এসে নালিশ করেও ফল পায়নি। অনেকের বাবা-মা আসেন স্ট্যান্ডে। তারা অভিযোগ করেন, তাদের ছেলেরা ঠিকমতো বাসায় যায় না। সংসারের খরচ দেয় না।

সূত্র জানায়, ফরিদপুর শহরে রেন্ট-এ কার চালক রয়েছেন প্রায় ২০০। এদের মধ্যে একটি অংশ নিয়মিত জুয়ার আসরে বসে। তারা দিনভর জুয়া খেললেও ভাড়ায় তেমন একটা যায় না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার দিয়ে আড়াল করে বসানো হয় আসর। প্রতি বোর্ডে ৩-৪ হাজার টাকার জুয়া চলে। প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকা চলে যায় জুয়ার বোর্ডে। এর একটি অংশ পান যারা বোর্ড বসান তারা। তাছাড়াও কয়েকজনকে টাকার ভাগ দিতে হয়। আরও জানা যায়, জুয়া চলাকালে মাদকও বিক্রি হয়। কথা হয় জুয়া খেলে একেবারে নিঃস্ব হওয়া দুজন চালক ও সংসার ভেঙে যাওয়া এক পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তারা জানান, জুয়া ও নেশার কারণে এখন আর সংসারের কোনো খোঁজ রাখেন না। বিভিন্ন জনের কাছে বলেও লাভ হয়নি। উল্টো তাদের ছেলেদের হাতে নাজেহাল হতে হয়েছে। মাইক্রোস্ট্যান্ডের জুয়াড় বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও রেন্ট-এ কার শ্রমিক ইউনিয়নের কেউ এ কাজে বাঁধা দেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। জেলা রেন্ট-এ কার শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনেক চেষ্টা করেও তাদের ঠেকাতে পারি না। বাধ্য হয়ে বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছে। জেলা কার ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান ঝনক বলেন, আমি নিজেই তাদের (জুয়াড়ি) বাঁধা দিয়ে মারপিট করে সরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা ফের জুয়ার আসর চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ দরকার। কোতোয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর