বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

লালমনিরহাটে সার সংকট

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটে সার সংকট

উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় লালমনিরহাটে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষার আবাদ। একইভাবে এ জেলায় বাড়ছে ভুট্টা ও আলুর আবাদ। আমন ধান কাটার পর কৃষক ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষা ও আলু চাষে। কিন্তু অন্যান্য সার পরিমাণে কম মিললেও পটাশ সার একেবারেই মিলছে না। এতে ভুট্টা, সরিষা ও আলু চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। সারের অভাবে ভুট্টা, আলুবীজ বপনে বিলম্ব হওয়ায় ফলন কম হওয়াসহ দাম না পাওয়ার আশঙ্কা চাষিদের। তবে পটাশসহ কোনো সারের সংকট নেই বলে দাবি করেছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা। কালিগঞ্জের শিয়াল খোওয়ায় সার নিতে আসা কৃষক আবু সাইদ বলেন, আমন ও বোরো আবাদের মাঝের সময়টা জমি পড়ে থাকে। তাই এসব জমি ফেলে না রেখে তিন ফসল চাষের উদ্যোগ নিয়েছি। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণে সরিষার দাম যেমন ভালো পাওয়া যাবে, তেমনি বাড়ির চাহিদা পূরণে এবার ১০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। কিন্তু সেই জমিতে সার দিতে না পারায় সরিষার ফলন কমে যাবে। সার কিনতে গিয়ে ঘুরে আসতে হচ্ছে। ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। আজ নয় কাল দেবে এভাবে শুধু আমাদের ঘোরাচ্ছেন দোকানিরা। আর তারা যে পরিমাণ সার দিচ্ছেন তাতে ফসলের ঠিকমতো ফলন হবে না। আমরা যেখানে তিন বস্তা সার দিই, সেখানে এখন সার দিচ্ছে ১০-১৫ কেজি করে। এ সার দিয়ে তো আবাদ সম্ভব নয়। সদরের বড়বাড়ির কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, ‘স্লিপের মাধ্যমে সার নিতে গিয়েও পাচ্ছি না। ডিলারের কাছে সার না পেয়ে বাড়তি দামে খোলাবাজারে কিনতে হচ্ছে। সারের দাম বস্তাপ্রতি কয়েক শ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে। যে কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে আমরা কীভাবে আলু চাষ করব।’ কৃষক সোবাহান আলী বলেন, ‘আট বিঘা জমির ধান কাটার পর তিন বিঘায় সরিষা ও পাঁচ বিঘায় আলুবীজ বপন করব। গত পাঁচ দিন সার আনতে গিয়ে ফিরে এসেছি। ছয় দিনের মাথায় ১০ কেজি করে পটাশ ও ডিএপি, আর পাঁচ কেজি ইউরিয়া সার পেয়েছি। যেখানে জমিতে সার প্রয়োজন পাঁচ বস্তা সেখানে যে পরিমাণ সার দিচ্ছে তাতে ঠিকমতো আবাদ করতেও পারছি না। ডিলাররা সার রেখেও দিচ্ছেন না। ফলে আলু ও সরিষা আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। আমরা যদি আগাম আলু ও সরিষা লাগাতে না পারি, তাহলে ফলন কম হবে। ঠিকমতো দাম পাব না।’ আদিতমারির কমলাবাড়ির কৃষক আইনুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে স্লিপ নিয়ে ডিলারের দোকানে সার নিতে এসেছি। ইউরিয়া, পটাশ ও ড্যাপ সার পাওয়ার কথা। দোকানে ইউরিয়া ও ডিএপি সার আছে কিন্তু পটাশ নেই। জমি প্রস্তুত করে রেখেছি। সারের অভাবে সরিষা লাগাতে পারছি না। কালিগঞ্জের গোড়ল ইউনিয়নের ডিলার শহিদুল ইসলাম বলেন, ডিএপি বা ইউরিয়া সার প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এসব সারের কোনো সমস্যা নেই। কৃষক সার পাবেন। শুধু পটাশ সারের একটু সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট বলতে ঘাটে সার নিতে গিয়ে ট্রাক তিন-চার দিন হলো দাঁড়িয়ে আছে। কোনো সার লোড হয়নি। এ কারণে সারের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া যে কৃষকের সার লাগবে ২৫ কেজি, সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন ৫০ কেজি। কারও লাগবে হয়তো এক বস্তা, তিনি নিয়ে যাচ্ছেন তিন বস্তা। যার কারণে পটাশ সারের সংকট দেখা দিয়েছে।

 ঘাটে ট্রাক লোড হয়ে গেলে দুই-এক দিনের মধ্যে পটাশ চলে আসবে। তখন আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে পটাশ ৭৫০ টাকা, ডিএপি ৮০০, টিএসপি ১ হাজার ১০০ ও ইউরিয়া সার ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করছি। এর বাইরে কোনো বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া সার তো বিক্রি করা হচ্ছে কৃষি অফিসের স্লিপের মাধ্যমে। কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘আমরা জোরালোভাবে সারের বিষয়টি মনিটর করছি। প্রত্যেক কৃষককে তার জমির পরচা ও কৃষি কার্ডে জমির পরিমাণ নিশ্চিত হয়ে স্লিপের মাধ্যমে সার দেয়া হচ্ছে। ফলে যতটুকু সার প্রয়োজন এ উপজেলায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে সে পরিমাণ সার পাচ্ছেন কৃষক। এ উপজেলায় কোনো সারের সংকট নেই। আমাদের যে পরিমাণ বরাদ্দ আসে তার ওপর নির্ভর করে আবাদি জমির পরিমাণ হিসাব করে কৃষকের সংখ্যা নির্ধারণপূর্বক স্লিপের মাধ্যমে সার দেওয়া হচ্ছে। পটাশ সারের কোনো সংকট নেই। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান বলেন, প্রতি বছর চাহিদার তুলনায় আলুর বাড়তি উৎপাদন হওয়ার কারণে কৃষকের দাম পাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। ফলে চলতি মৌসুমে লালমনিরহাট জেলায় কিছুটা কমিয়ে ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলুবীজ বপন করা হয়েছে। গত বছর জেলায় ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিল। বর্তমানে মাঠের যে অবস্থা তাতে এবার আলু চাষ কিছুটা কমবে। এ বছর ১৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আশা করছি আরও ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর