শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কর্মচঞ্চল চলনবিলের শুঁটকিপল্লী

নাটোর প্রতিনিধি

কর্মচঞ্চল চলনবিলের শুঁটকিপল্লী

শুটকি প্রক্রিয়াজাত করার কাজে ব্যস্ত শ্রমিক। নাটোরের সিংড়ার নিংগইন চাতালের ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়ার মিঠা পানির শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎপাদন। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শুঁটকি। মৌসুমের এক মাস বাকি থাকতেই গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন বেড়েছে ৯০ টন। একটি মাছ সংরক্ষণাগার থাকলে শুঁটকি উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন উৎপাদনকারীরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ কাটা, বাছাই, ধোয়া, রোদে শুকানো, তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

নাটোর মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিংড়ায় চারটি চাতাল ও ৩০টি এলাকায় বিলের মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করেন ৩১৩ জন। ২০২১ সালে সিংড়ায় ৩১৯ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪১২ টন। নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ধারে নিংগইন এলাকায় গড়ে উঠেছে চলনবিলের সর্বববৃহৎ শুঁটকি চাতাল। নারী-পুরুষ মিলিয়ে এ চাতালে কাজ করছেন ২৫ জন শ্রমিক। উৎপাদনকারীরা জানান, প্রতি বছর ভরা বর্ষায় প্রচুর মাছ বংশবিস্তার করে বিলের পানিতে। হাঁটুপানিতে নেমেই এসব মাছ ধরা যায়। তখন বাজারেও সস্তায় বিক্রি হয় মাছ। চলনবিলের চাহিদা মিটিয়ে মাছগুলো বাইরে চলে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে কম দামে বিলের মাছগুলো কিনে বাইরের বাজারে চড় দামে বিক্রি করেন। যেসব মাছ অবিক্রীত থাকে সেগুলো কিনে নেন শুঁটকি উৎপাদকরা। অক্টোবর থেকে পানি কমতে শুরু করায় শুকিয়ে যায় খাল ও বিলগুলো। তখন পলো বা হাত দিয়েই ধরা যায় টাকি, শোল, পাতাসি, চান্দা, পুঁটি, টেংরা, গজার, মাগুর, কই, চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির দেশি মাছ। এসব মাছের কিছুটা বিক্রি হয় বিল সংলগ্ন হাটবাজারগুলোতে আর কিছুটা সরাসরি আসে শুঁটকি চাতালে। চলনবিল থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মণ শুঁটকি বিক্রি হয়। সিংড়ার শুঁটকি যায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, দিনাজপুর, কক্সবাজার, রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে শুঁটকি কিনে নেন। এখানকার শুঁটকি প্রস্তুতে লবণ ছাড়া অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করায় চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। শুঁটকি ব্যবসায়ী জমির উদ্দীন বলেন, সারা বছর আমরা শুঁটকি বিক্রি করতে পারতাম যদি একটা মাছ রাখার জায়গা থাকত। দেশে শুঁটকির চাহিদা মেটাতে সিংড়ায় মৎস্য সংরক্ষণাগার তৈরি জরুরি। ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, বিলের মাছগুলো সংরক্ষণ করা গেলে শুঁটকি উৎপাদনে বিপ্লব হতো সিংড়ায়। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্ষা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় চলনবিল এবার বেশি সময় পানি ধরে রেখেছে। এতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় মাছের পরিমাণ ও আকার দুটোই বেড়েছে। জেলেরা সংরক্ষণাগারের দাবি জানিয়েছেন। সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে নির্দিষ্ট মাছের বাজার রয়েছে। যেখান থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের চাহিদা পূরণ করছে।

সর্বশেষ খবর