বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঘন কুয়াশায় ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

ঘন কুয়াশায় ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে নষ্ট হচ্ছে লালমনিরহাটে বোরোর বীজতলা। অধিক কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে কৃষকের শিম, লাউ, করলা, মিষ্টি কুমড়া, আলু, শাকসবজিসহ বিভিন্ন রবি ফসল। গত বছর বন্যার কারণে দাম চড়া ও বীজ উৎপাদন কম থাকায় চলতি বছর কৃষকরা সবজি চাষ বেশি করেছেন। কিন্তু তীব্র শীতের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর ঘন কুয়াশায় নষ্ট হতে শুরু করে তাদের স্বপ্নের ফসল। পাতা পচা রোগ থেকে ফসলকে রক্ষায় দফায় দফায় কীটনাশক প্রয়োগ করেও সুফল পাচ্ছেন না কৃষক। কৃষকরা বলছেন, চরম দুঃসময়েও তারা পাশে পচ্ছেন না কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিরা জানান, কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা। উত্তরের শস্যভাণ্ডারখ্যাত লালমনিরহাটে তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই তলানিতে নামছে। এ অবস্থায় বীজতলা পচে বোরো ধানের চারা সংকটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, তারা বীজতলায় ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন। কুয়াশা থেকে রক্ষায় পলিথিন দিয়েও ঢেকে রাখছেন বীজতলা। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। গত আমন ও আউশ মৌসুমে বন্যা এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ভালো ফলন পাননি তারা। এবারের তীব্র শীত কুয়াশায় বোরো নিয়েও রয়েছেন শঙ্কায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক দিনে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। দিনের বড় অংশই কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকায় আলু খেতে দেখা দিয়েছে ছত্রাকের আক্রমণ। কোনো কোনো জায়গায় আলু গাছ হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকের আলু গাছে পোড়া ও পাতা ঝলসানো রোগও দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, ‘ক্ষতি কমাতে আমরা কৃষকদের সার্বিক নির্দেশনা ও সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। তবে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক মাত্রায় কমতে থাকলে ক্ষতি বেশি হবে। এমনিতেই এ এলাকায় শীত অনেক বেশি। সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠাণ্ডায় লালমনিরহাটে বোরো বীজতলাসহ নানা ফসল নষ্ট ও আলু খেতে মড়ক ধরেছে। কৃষকরা ফসল রক্ষায় নানা প্রদক্ষেপ নিলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তা কাজে আসছে না। এতে ফসলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফসল রক্ষা করতে কৃষি বিভাগ পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছে। লালমনিরহাটে ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় পথঘাট ঢেকে থাকছে। এক সপ্তাহ ধরে চলা এমন আবহওয়ার কারণে বোরো বীজতলার ধানের বীজ হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে। এ ছাড়া আলু, পিঁয়াজসহ অন্যান্য ফসলের খেতে দেখা দিয়েছে মড়ক। পর্যাপ্ত আলো না পাওয়ায় আলুপাতা কুকড়ে গিয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। কৃষক ফলন রক্ষায় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছে। সদর উপজেলার বড়বাড়ি এলাকার কৃষক লিমন উদ্দিন, সাহেব আলী বলেন, ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে সাড়া বেলা।

এর ফলে প্রায় ১০ কাঠা পরিমাণ বোরো বীজতলার বীজ হলুদ হয়ে মরে যেতে বসেছে। প্রায় ৩ বিঘা জমির আলু খেতেও দেখা দিয়েছে মড়ক ঘন কুয়াশা ও ঠাণ্ডায় ফসলের ক্ষতি ঠেকাতে কৃষক বেলা বাড়ার সঙ্গে ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেও দেখা মিলছে না রোদের। এ অবস্থায় ফসলের ক্ষতি বাড়ার আশঙ্কা কৃষকের। বিশেষ করে পিঁয়াজ ও আলু খেত নিয়ে বেশি চিন্তিত কৃষক। চলতি মৌসুমে জেলায় ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু, ৮০০ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ চাষ এবং ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করেছেন কৃষক।

সর্বশেষ খবর