রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক সড়কে কাটা হচ্ছে গাছ, ঝুঁকিতে মহাসড়ক

নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক সড়কে কাটা হচ্ছে গাছ, ঝুঁকিতে মহাসড়ক

নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকার ৫৪৩টি গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। নড়াইল সদর উপজেলার সীমাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে কালিয়া উপজেলার বারইপাড়া খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কের এই গাছ কাটা হচ্ছে। তবে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সড়কের পাশ ঘেঁষে মাটি খুঁড়ে শিকড় উপড়ে গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। এতে মূল সড়ক ঝুঁকির মধ্যে পড়ার পাশাপাশি অনেক জায়গা ভেঙে যাচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, নড়াইল জেলা পরিষদের মালিকানাধীন নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক সড়কের উন্নয়নের কথা বলে গত ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ৫৪৩টির বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লুনা এন্টারপ্রাইজ কার্যাদেশ পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শতবর্ষী গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫৪৩টি গাছ মোট ৭৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। গড়ে প্রতিটি গাছের দাম পড়ে ১৩ হাজার ৬৯২ টাকা। সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তারা এই গাছগুলো কাটা শুরু করেন। সেই দরপত্র মোতাবেক সড়কের পাশ ঘেঁষা ৫৪৩টি বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গাছ কাটা শুরু হয়ে ইতোমধ্যে অধিকাংশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এখনো অর্ধশতাধিক গাছ কাটা বাকি রয়েছে। তবে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সড়কের পাশ ঘেঁষে মাটি খুঁড়ে গাছের শিকড় উপড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে মূল সড়কের অনেক জায়গা ভেঙে গেলেও সেগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কোনো পক্ষই। সম্প্রতি নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক সড়ক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের কোল ঘেঁষে মাটি খুঁড়ে শ্রমিকরা গাছের গোড়া ও শিকড় তুলে গাছ কাটছেন। এ ছাড়া ইতোমধ্যে সড়কের দরপত্রকৃত প্রতিটি গাছ গোড়া ও শিকড় তুলে কেটে নেওয়ায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে প্রতিনিয়ত সড়ক ভাঙছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলার ধাড়িয়াঘাটা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ফসিয়ার রহমান মোল্যা বলেন, ‘সড়কের দুই পাশের গাছগুলো ছিল এই এলাকার মানুষের সবুজ বেষ্টনী। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব গাছ আমাদের রক্ষা করেছে। তাছাড়া সড়কের পাশেই শোভা বর্ধনকারী ও ছায়াদানকারী গাছগুলো নির্বিচারে কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এর ওপর আবার সড়কের লাগোয়া গাছগুলোর মাটি খুঁড়ে গাছের গোড়া ও শিকড় তুলে গাছ কেটে নেওয়ায় সড়ক ভেঙে যাচ্ছে।’ সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার কৃষক সোহরাব বলেন, ‘সড়কের দুই পাশের গাছ কেটে অক্সিজেন কারখানা ধ্বংস করা হচ্ছে। গাছগুলোর সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লুনা এন্টারপ্রাইজের মালিক আসাদুজ্জামান আসাদ দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাঁর অংশীদার মো. নবীর হোসেন বলেন, ‘দরপত্রের নির্দেশনা অনুসারে আমরা গাছ কেটে নিচ্ছি।

এতে সড়কের কোনো ক্ষতি হবে না। এরপরও যদি মাটি খুঁড়ে গাছের গোড়া ও শিকড় তুলে গাছ কেটে নেওয়ায় সড়কের কোনো ক্ষতি হলে, এটা মেরামতের দায়িত্ব সড়ক ও জনপদ বিভাগের।’ এ ব্যাপারে নড়াইল সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ,এম,আতিক উল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে আমরা চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মাটি খুঁড়ে শিকড় উপড়ে গাছ না কাটার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা এগুলো হয়তো বোঝে না। আর আমাদের লোকবলের সংকটের কারণে আমরা সঠিকভাবে তদারকি করতে পারছি না। তবে শিগগিরই গর্তগুলো মাটি দ্বারা ভরাট করার পাশাপাশি জেলা পরিষদকে অবহিত করা হবে।’

 

সর্বশেষ খবর