বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নাব্য সংকটে যমুনা নৌঘাট দুই কিলোমিটার দূরে স্থানান্তর

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

নাব্য সংকটে যমুনা নৌঘাট দুই কিলোমিটার দূরে স্থানান্তর

বগুড়ায় যমুনা নদীর নাব্য সংকটে সারিয়াকান্দির কালিতলা  নৌঘাট দুই কিলোমিটার দূরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ী গ্রামের সামনে এই নৌঘাট স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে করে চরের মানুষের অনেক পথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। সেই সঙ্গে অধিক সময় ব্যয় হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কালিতলা ঘাটের ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হচ্ছে নৌঘাটে। শত শত কিলোমিটার পলি পড়ায় সাধারণ মানুষের মাথায় মালামাল নিয়ে যেতে হচ্ছে অতি কষ্টে। ফলে চরের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি কালিতলা নৌঘাট হতে মাদারগঞ্জ জামথল নৌঘাটে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীসহ  মোটরসাইকেলে ও নানা ধরনের কৃষিপণ্যসহ পরিবহন করা হয়। নদীর নাব্য না থাকায় এই নৌরুটের কালিতলা নৌঘাটে আর যাত্রী পরিবহন হচ্ছে না। গত এক সপ্তাহ হলো ঘাটটি একই উপজেলার পৌর এলাকার কালিতলা থেকে সদর ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ী গ্রামের সামনে স্থানান্তর করা হয়েছে। ফলে যাত্রীদের দুই কিলোমিটার ঘুরে নতুন নৌঘাটে যেতে হচ্ছে। এতে চরের যাত্রীরা শহরে এসে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় অতিরিক্ত অটো ভাড়া দিতে হচ্ছে। অপরদিকে সময়ও বেশি অপচয় হচ্ছে। পাশাপাশি কালিতলা ঘাটের স্থানীয় পুরাতন নৌঘাটে বিভিন্ন ধরনের দোকানিরা এখন লোকসান গুনছেন প্রতিদিন। তাদের বেচাকেনা এখন নেই বললেই চলে। মানুষ চলাচল না থাকায় আগের মতো তাদের আর ব্যবসাও হচ্ছে না। ফলে তারা অনেকটা কষ্টে জীবন যাপন করছেন। গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ায় নাব্য সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। যমুনা নদীর নাব্য সংকটে এই নৌরুটে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই নৌরুটের নৌকাগুলো ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। মাঝিরা নদীতে নেমে অনেক কষ্টে যাত্রীসহ নৌকাগুলো ঠেলে ডুবোচর হতে নামাচ্ছেন।

 ফলে সারিয়াকান্দি পৌরসভার কালিতলা নৌঘাট দুই কিলোমিটার দূরে দেলুয়াবাড়ি গ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে।

কালিতলা নৌঘাট অন্যত্র স্থানান্তর করায় যাত্রীদের বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। কালিতলা নৌঘাট হতে জামথল নৌঘাটের খেয়া নৌকার ভাড়া ছিল ৬০ টাকা। আর রিজার্ভ নৌকার ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। এখন সারিয়াকান্দি উপজেলা সদর হতে বাগবেড় নৌঘাটে যেতে সড়কপথে যাত্রী ভাড়া মাথাপিছু ২০ টাকা দিতে হচ্ছে। অপরদিকে দূরত্ব বৃদ্ধিতে খেয়ানৌকার ভাড়া হয়েছে ৮০ টাকা। ফলে মাদারগঞ্জের জামথল যেতে যাত্রীদের ৪০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে রিজার্ভ নৌকার ভাড়া ১০০ টাকা হতে ১৪০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া একই নৌরুটে গুঠাইল, মানিকদাইড়, চরঘাগুয়া এবং ইসলামপুর যেতে যাত্রীপ্রতি ২০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে কালিতলা নৌঘাট অন্যত্র স্থানান্তর করায় ব্যাপক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটে পারাপার হওয়া আবদুল খালেক জানান তিনি জামালপুরে একটি এনজিওতে চাকরি করেন। তার বাড়ি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায়। তিনি প্রায়ই কালিতলা ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন। তিনি জামালপুর যাওয়ার জন্য কালিতলা ঘাটে এসেছিলেন। এসে জানতে পারেন কয়েকদিন হলো ঘাটটি দুই কিলোমিটার দক্ষিণে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আমার আবার নতুন নৌঘাটে যেতে হচ্ছে। এতে সময় এবং ভাড়া দুটিই বেশি লাগবে। স্থানীয় কালিতলা ঘাটের মতির হোটেলের স্বত্ব¡াধিকারী মতিউর রহমান জানান আমাদের কালিতলা নৌঘাটে হোটেলসহ ছোটবড় মোট ৫০টির বেশি মুদি দোকান রয়েছে। এসব দোকানের ওপর নির্ভরশীল আমাদের সবার পরিবার। নৌঘাটটি স্থানান্তর করায় আমাদের বেচাকেনা একেবারেই বন্ধের দিকে। এখন সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। সরকার যদি নদীটা আর অল্প কিছু ড্রেজিং করে দিত তাহলে যাত্রীদেরও সুবিধা হতো আমাদের পরিবারগুলোও ভালোভাবে চলত। নৌরুটটির অল্প কয়েকটি স্থানে ড্রেজিং করে দিলে নৌরুটটি পুনরায় চালু হতো। সারিয়াকান্দি কালিতলা নৌঘাটের ইজারাদার শহিদুল ইসলাম আকিল জানান, যমুনা নদীর নাব্য সংকটের কারণে নৌঘাটটি অস্থায়ীভাবে দলুয়াবাড়ি গ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে সাধারণ মানুষের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, যমুনা নদীর নাব্য সংকটে কালিতলা নৌঘাট বাগবেড় গ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে জনসাধারণের সাময়িক দুর্ভোগের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কালিতলা নৌরুটটি নাব্য ফিরে পেলে পুনরায় ঘাটটি দেলুয়াবাড়ি থেকে কালিতলায় নিয়ে আসা হবে।

সর্বশেষ খবর