সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
শীতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ

শয্যা সংকটে মেঝেতে রোগী

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

শয্যা সংকটে মেঝেতে রোগী

দেড় বছরের শিশু সাদিয়াকে নিয়ে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা থেকে নওগাঁ আধুনিক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সামনে করিডরে বিছানো শয্যায় বসেছিলেন মা মৌসুমী খাতুন। তিনি একটু পরপর মেয়ের নাক মুছে দিচ্ছিলেন। মৌসুমীর মতো অনেক অভিভাবকই সদর হাসপাতালে শিশুকে ভর্তি করে চিকিৎসা করাচ্ছেন। অনেকে হাসপাতালে জরুরি ওয়ার্ডে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। জানা যায়, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁয় শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে শিশু ও বৃদ্ধদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। জেলার হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, অ্যাজমা, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। সরেজমিন সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শয্যা সংকটের কারণে একই বেডে দুজন-তিনজন করে শিশু রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে বেড না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝে এবং হাসপাতালের করিডরে শিশুকে রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন। শুধু নওগাঁ সদর হাসপাতালই নয়, জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঠান্ডায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। নওগাঁ সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত সাত দিনে নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৬৮ শিশু। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই সাত দিনে ভর্তি হয়েছে ১৭৫ শিশু। অর্থাৎ প্রতিদিন ৩৪ জনের বেশি শিশু রোগী নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডের নার্স রোজিনা আক্তার বলেন, অন্যান্য সময় শিশু ওয়ার্ডে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে শিশু ভর্তি থাকে। সেখানে গত ১৫-২০ দিন ধরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ শিশু ভর্তি থাকছে। ফলে চিকিৎসকদের পাশাপাশি এত রোগীর চাপ সামলাতে নার্সদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ রতন কুমার সিং বলেন, সাধারণত শীতের সময় শিশুদের ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা যায়। সাধারণত হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৫-৩০ জন রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে ঠান্ডাজনিত রোগ হলেই বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এ সময় শিশুদের গরম পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো অব্যাহত রাখতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে শিশুকে নিয়ে ঘরের বাইরে হওয়ার যাবে না। মায়েদেরও ঠান্ডা লাগানো যাবে না। জানা যায়, গত সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭০ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৪৮ জন। আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই শিশু। নওগাঁর সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান বলেন, এক সপ্তাহে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগী বাড়লেও আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

আক্রান্ত হয়ে পাঁচ শর অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়াকে ঠিক অস্বাভাবিক না বললেও অন্য সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা বেশি।

পরিস্থিতি স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ ও রোগীদের জন্য কম্বল রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর